![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
৫১ শতাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেকার, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ডলারের অপচয় হচ্ছে : সিপিডি
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2023/11/image-715259-1694036835-400x225.jpg)
সোহেল রহমান : [১] দেশে কয়লা ও এলএনজি আমদানি নির্ভরতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকার জ্বালানি রূপান্তরের উল্টোপথে যাত্রা শুরু করেছে। আমদানি প্রবণতার কারণে পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) পেমেন্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আমদানিকে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেভাবে দেশীয় জ্বালানির উত্তোলনে গুরুত্ব দেয়া হয় নি। যে কারণে আজকের এ সংকট।
[২] বৃহস্পতিবার ‘কারেন্ট চেইঞ্জ- কোয়ার্টারলি ব্রিফ অব দ্য পাওয়ার এন্ড এনার্জি সেক্টর’ শীর্ষক মিডিয়া বিফ্রিংয়ে এমন মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সংস্থার রিসার্স এসোসিয়েটস হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।
[৩] প্রসঙ্গত: প্রতি তিন মাস পরপর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করার একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সিপিডি। এ উপলক্ষে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম কোর্য়াটারের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ওপর রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
[৪] সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির করার সুযোগ থাকলেও সেটা করা হচ্ছে না। নতুন গ্যাস কূপ না করলেও পুরাতন গ্যাস কূপের সংস্কার যথাসময়ে হলেও এ সংকট হতো না। গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে এলএনজি আমদানির জন্য ঋণ নেয়া হচ্ছে। সরকারের ৪৬টি কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেটা পূরণ করা উচিত।
[৫] তিনি বলেন, অন্যদিকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রতিনিয়ত ডলারের অপচয় করা হচ্ছে। যেখানে আমরা এক ডলার সঞ্চয় ধরে রাখতে রীতিমত যুদ্ধ করে যাচ্ছি, সেখানে এলএনজি ও কয়লা আমদানি নির্ভরতায় ডলার খরচ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আমদানি কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিকল্প জ্বালানির দিকে যেতে না পারলে ডলার সংকট দূর করা সম্ভব নয়।
[৬] গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের ৬৭০ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট বকেয়া পড়েছে বিপিসি’র। অন্যদিকে পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি বাবদ বকেয় পড়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মতো। এই দায় মেটাতে পেট্রোবাংলা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছে ৬ মাসের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেট ঋণ নিচ্ছে। সিন্ডিকেট ঋণ সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি মনে হলেও বিপদ বাড়াবে। আমরা এখনই বকেয়া পরিশোধ করতে পারছি না, এর সঙ্গে সুদসহ বোঝা যুক্ত হচ্ছে।
[৭] তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এ কার্যক্রমের অগ্রগতি গড়ের চেয়ে অনেক নীচে অবস্থান করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে কোনটিই নির্ধারিত সময়ে আসতে পারে নি। বিলম্বে কিংবা আংশিক উৎপাদনে এসেচে ৪টি, আর ৯টি এখনও উৎপাদনে যেতে পারেনি।
[৮] এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের ৫১ শতাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেকার পড়ে থাকছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক সময় উদ্বৃত্ত ছিল, এখন উদ্বৃত্ততর থেকে বাহুল্য হয়ে গেছে। যা মাথা ব্যাথার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন করে চুক্তি নবায়ন করা উচিত হবে না।
[৯] বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিন্ন ভিন্ন ট্যারিফ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবকিছুর মূলে হচ্ছে দায়মুক্তি আইন। যদি প্রতিযোগিতামুলক বাজার থাকতো তাহলে এমন অসম চুক্তি হতো না। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে মালিকের নাম পাশে বসালে দারুণ একটি যোগসূত্র দেখা যায়। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি এসব সুবিধা পাচ্ছে। চুক্তির অস্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
[১০] নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকারের আগ্রহ দেখা গেলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে কার্যত লাভবান হওয়া যাবে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা না গেলে উচ্চমূল্যের বিদ্যুতে ভোক্তার ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে।
[১১] সিপিডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলএনজি আমদানি নীতি সিদ্ধান্ত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। আরও দু’টি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং গ্যাস রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) স্থাপনের চুক্তি করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য নতুন করে ২০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে জোর দেয়া হয়েছে।
[১২] বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়, বিদ্যুতের সবচেয়ে কম ব্যবহার হচ্ছে ময়মনসিংহ ও রংপুর জোনে। তবে বিগত তিন মাসে এসব জোনেই বেশি লোডশেডিং দেয়া হয়েছে। লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু উৎপাদন ঘাটতি নয়, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেও লোডশেডিং বেড়েছে। গত জুনে সঞ্চালন সমস্যার কারণে প্রায় ২ হাজার ৪১০ ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকে। আগস্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল ৫ হাজার ১৬ ঘণ্টা।
[১৩] সিপিডি বলেছে, বাংলাদেশে গ্যাস থেকে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে। বেড়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে কার্বন নিঃসরণও। গত ১১ বছরে যা ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু হারাচ্ছে মানুষ।
[১৪] গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির সবচেয়ে খারাপ উপদান কয়লা। সেটার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার জ্বালানি রূপান্তরে উল্টোপথে যাত্রা শুরু করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কয়লা নির্ভরশীলতা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে কয়লাজনিত ব্যয় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, জ্বালানি রূপান্তরের জন্য পরিবর্তনের পথে যাওয়া দরকার। গত তিন মাসে সেটা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক নিচে। অর্থাৎ জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাত এখনও দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)