শীতকালীন সবজি ভরপুর থাকায় সবজি ও ডিমের দামে স্বস্তি কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ, মুরগির বেড়েছে চাল, আটা, ময়দা ও চিনি
মাসুদ মিয়া: রাজধানীতে শীতকালীন সবজি ভরপুর থাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে। গত কয়েক মাস ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো স্বস্তির খবর আসছিল না। সবকিছুর দামই শুধু বেড়েই চলছিল। [২] গত সপ্তাহ ব্যবধনে ডিম, মুরগির ও সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে দাম বেড়েছে আটা, ময়দা, চাল আলুর।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। এদিকে, ভারত থেকে ডিমও আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তারও থেকে ডিমের দাম কমেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বেশ কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। খুচরা বাজারে এখন প্রতি ডজন ডিম ১২০ টাকায় থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১১৫ টাকা দরে। সঙ্গে পেঁয়াজের দামও কেজিপ্রতি কমেছে ১০ টাকা। তবে আগে থেকে পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি চড়া থাকায় নতুন দামে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না ক্রেতারা। আলুর দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমলেও এ সপ্তাহে আবার বেড়েছে। আর নতুন করে আরও কিছুটা বেড়ে চিনির দাম কেজিতে দেড়শো টাকা ছুঁয়েছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক সপ্তাহে বেড়েছে কেজিতে প্রায় দুই টাকা। সঙ্গে এতোটা না বাড়লেও মাঝারি ও সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১-২ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে সরবরাহ কমায় বাজারে মোটা চালের দাম বাড়ছে। যদিও তথ্য বলছে, সরকারের গুদামে চালের মজুত পর্যাপ্ত। যে কারণে পাইকারি বাজারে একপক্ষের অভিযোগ- মিলারদের কারসাজির কারণেই মূলত চালের দামে উল্লম্ফন হয়েছে। মিল মালিকেরাই কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরি করেছে।
বাজারে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকা, যা এক মাস আগে ৫০-৫২ আর এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৩-৫৫ টাকা। মাঝারি আকারের মধ্যে প্রতি কেজি বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা। আগে এ চালের দাম ছিল ৫৪-৫৬ টাকা। আর প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন আলুর কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। মাঝে দাম কিছুটা নিম্নমুখী হলেও এখন আবার বাড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে বছরজুড়ে এ আলুর দাম থাকে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। এরমধ্যে ভারত থেকে আলু আমদানি হচ্ছে। তবে যে সামান্য পরিমাণে আলু এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লার কোন কোন দোকানে এ দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত। যেখানে গত ১ নভেম্বর চিনির বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে চিনি আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক অর্ধেক কমানো হয়। কিন্তু তার কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। বরং এরমধ্যে দুই দফা চিনির দাম বেড়েছে।
ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খামার মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুরগির সরবরাহ বেড়েছে অন্যদিকে, অবরোধের কারণে কমেছে চাহিদা। এখন সামাজিক অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় মুরগির চাহিদা কমেছে। সে জন্য দাম নিম্নমুখী।
মতিঝিল বাজারের মুরগি বিক্রেতারা বলেন, মুরগির সরবরাহ বেড়েছে সেই জন্য দাম কিছুটা কমেছে।
পাশাপাশি বাজার এখন শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। এতে দামও কিছুটা কমছে। দুই-তিনটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। যেখানে দু-তিন সপ্তাহ আগেও সব ধরনের সবজির দাম ছিল আকাশছোঁয়া। তখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ছিল ১০০ টাকার আশপাশে।
মতিঝিল এজিবি কোলনী বাজারের বিক্রেতারা বলেন, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ ভালো আছে। প্রতি কেজি সবজির গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ক্রেতারাও স্বস্তিতে ব্যাগ ভর্তি করে খুশি মনে বাজার করে নিয়ে যাচ্ছেন। সামনে এক মাসের মধ্যে আরও কমবে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০-৪৫০, কাতল মাছ ৩০০-৪৫০, কালিবাউশ ৪০০-৬০০, চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০, কাঁচকি মাছ ৫০০-৬০০, পাবদা মাছ ৫০০-৬০০, শিং মাছ ৪০০-৫০০, বেলে মাছ ৫০০-৮০০ টেংরা মাছ ৬০০-৮০০, বোয়াল মাছ ৫০০- ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মসুর ডাল ১৩০-১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১০০-১০০ টাকা, মুগ ডাল ১৪০ টাকা, খেসারি ডাল ৯৫ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে স্বস্তি মিলছে না পেঁয়াজের দামে। যদিও গতকাল কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে ১১০ টাকা দর থেকে ১২০ টাকা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পেঁয়াজের এ দাম দ্বিগুণেরও বেশি। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। এদিকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আটার কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা এবং ময়দার কেজিতে সর্বোচ্চ ছয় টাকা দাম বেড়েছে।
ভোগ্যপণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে গম আমদানিতে খরচ বেড়েছে। ফলে বাজারে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।
আটা ও ময়দার খুচরা বিক্রেতারা জানান, গত বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে অস্বাভাবিক দর বেড়ে যাওয়ার পর কয়েক মাস আগে আটা-ময়দার দাম কিছুটা কমে আসে। প্রায় তিন মাস এক রকম স্থির ছিল দর। তবে সম্প্রতি আটা-ময়দার দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে ৫০ কেজি ওজনের আটার বস্তায় ২০০ আর ময়দায় বেড়েছে ৩০০ টাকা। এতে বাজারে খোলা আটার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ এবং প্যাকেট আটার কেজি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে খোলা আটা ৪২ থেকে ৪৫ এবং প্যাকেট আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে খোলা ময়দার কেজি ৫৫ থেকে ৬০ এবং প্যাকেট ময়দার কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে এখন খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৬ এবং প্যাকেট ময়দার কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এবিষয়ে মতিঝিল এজিবি কোলনী বাজারের ক্রেতা সাইফুল বলেন, কয়েক মাস চড়া দামে থাকার পর সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।