জমা হয়েছে ১৬ কোটি টাকা সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রথম মাসের তুলনায় তৃতীয় মাসে সাড়া কম
এস.ইসলাম জয় : [১] আগস্টে শুরু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমের এখন তিন মাস। গত ১৭ আগস্ট এই কর্মসূচি চালু করে সরকার। সেই হিসেবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে গড়ালো সর্বজনীন পেনশন স্কিম। এখন মোট গ্রাহকের সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৪৫ জন। প্রথম এক মাসে এ স্কিমের গ্রাহক হওয়ার জন্য যত সাড়া দিয়েছিলেন, পরের দুই মাস মিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা তার কাছাকাছিও হয়নি।
[২] পেনশন কর্তৃপক্ষ তথ্যে জানা যায়, পেনশন স্কিমে যোগ দিতে সবচেয়ে কম চাঁদা জমা পড়েছে শেষের এক মাসে। শেষের এক মাস ধরা হয়েছে ১৮ অক্টোবর থেকে ১৮ নভেম্বরের দুপুর ১২টা পর্যন্ত। তবে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশাবাদী যে খুব শিগগির গ্রাহকদের ভালো সাড়া মিলবে। কারণ, সরকার এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এবং আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
[৩] প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, গত তিন মাসে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে গ্রাহকদের থেকে চাঁদা জমা পড়েছে মোট ১৬ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
[৪] গত ১৭ আগস্ট এ স্কিম উদ্বোধনের পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম এক মাসে চাঁদা পরিশোধ করেছিলেন ১২ হাজার ৮৮৯ জন। পরের এক মাসে নতুন করে ১ হাজার ৮৩১ জন যুক্ত হওয়ায় মোট চাঁদাদাতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৪ হাজার ৭২০। তার পরের মাস, অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত পেনশন স্কিমে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ১৩৪ জন। এ তিন মাস মিলিয়েই মোট চাঁদাদাতা হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৫৪ জন।
[৫] তবে চাঁদাদাতাদের পরিসংখ্যান বলছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যোগদানের সংখ্যা প্রতি মাসেই কমছে। প্রথম দিন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ৮ হাজার মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করলেও পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে চাঁদা দিয়েছিলেন ১ হাজার ৭০০ জন।
[৬] পেনশন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চার স্কিমের মধ্যে প্রগতিতে ৭ হাজার ২১ জন ৮ কোটি ৬০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, সুরক্ষায় ৬ হাজার ৫২৮ জন ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা, প্রবাসে ৪৭৪ জন ১ কোটি ৪১ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং সমতায় ১ হাজার ৮২২ জন ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা চাঁদা জমা দিয়েছেন।
[৭] চাঁদা দিয়ে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারেন ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ। দেশের অন্তত ১০ কোটি মানুষ পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসবেন এমন প্রত্যাশা সরকারের রয়েছে। বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনা এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই পেনশন স্কিম চালু করা হয়। [৮] দেশের বিপুলসংখ্যক নাগরিক পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন সরকারের এমন প্রত্যাশা থাকলেও প্রথম তিন মাস পর্যন্ত মানুষের সাড়া খুবই কম। তবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা আশা করছেন, মানুষ এই কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, শুরুতে সোনালী ব্যাংক থাকলেও এখন অগ্রণী ব্যাংকও পেনশন স্কিমের সেবা দেওয়ার কাজ করছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ফলে স্কিম নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।
[৯] আশাবাদের আরও কোনো ভিত্তি আছে কি না, তা জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রবাস স্কিমের কথা যদি বলি, অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন কিন্তু অর্থ পাঠাতে পারছেন না। কারণ, অনেকেরই ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড নেই। এ সমস্যা দূর করতে এখন যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় রেমিট্যান্স) আসে, সেসব ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করার কাজ চলছে। অর্থসচিব সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি বৈঠক করেছেন।
[১০] প্রগতি স্কিমের আওতায় একটা প্রতিষ্ঠানও যদি এসে যায়, তাহলেই তো ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাহক যুক্ত হয়ে যাবেন এমন মন্তব্য করে গোলাম মোস্তফা বলেন, একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হলে আরও প্রতিষ্ঠান আসবে বলে আশা করা যায়।