সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকা
মাসুদ মিয়া : [১] দেশের শেয়ারবাজার পতনের হাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেখা দেওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে শুরু হওয়া পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পাশপাশি কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে বড় অঙ্কে কমেছে বাজার মূলধন।
[২] সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর মাধ্যমে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন ৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে। অন্যদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ১৫ পয়েন্ট। আর দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।
[৩] গেলো সপ্তাহের বেশিরভাগ কার্যদিবস অবরোধের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশ। বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা এই অবরোধের মধ্যে শেয়ারবাজারের লেনদেন প্রক্রিয়া ছিলো স্বাভাবিক। তবে অধিকাংশ দিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
[৪] এতে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার দ্বিগুণের বেশি। সপ্তাহজুড়ে বাজারটিতে ৫০টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৫টির। আর ২১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
[৫] দাম অপরিবর্তিত থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
[৬] দাম কমার তালিকা বড় হওয়ায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা বা দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের সপ্তাহ বাজার মূলধন কমে ৫ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমলো ৯ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
[৭] এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
[৮] প্রধান মূল্যসূচকের সঙ্গে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গেলো সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা দশমিক ৪২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা দশমিক ২৮ শতাংশ।
[৯] আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গেলো সপ্তাহে কমেছে ৩ দশমিক ২২ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ।
[১০] সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৩৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
[১১] আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৭৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ৫৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ৪২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
[১২] গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ৬৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এমারেল্ড অয়েল।
[১৩] এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, জেমিনি সি ফুড, বিডি থাই অ্যালুমেনিয়াম, দেশবন্ধু পলিমার, ইয়াকিন পলিমার, প্যাসেফিক ডেনিমস এবং সেন্ট্রাল।