সোহেল রহমান : [১] রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর অব্যাহতি কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর অব্যাহতির একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইন তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কর অব্যাহতির বিষয়টি যাতে অবারিত না থাকে, সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে কেবলমাত্র যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অব্যাহতি পাওয়ার যোগ্যÑ তাদেরকে এ সুবিধা দিতে কাজ করবে কমিটি।
[২] এনবিআর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহ দিয়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে সাহায্য করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় শিল্পের এমন কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে দেয়া শুল্ক সুবিধা পর্যালোচনা করে অব্যাহতি কমানোর পরিকল্পনা করবে এই কমিটি। এ পদক্ষেপের ফলে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কর অব্যাহতির কিছু সুবিধা হারাতে পারেন।
[৩] প্রসঙ্গত: সম্প্রতি কর অব্যাহতি সংস্কৃতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনবিআর। সেখানে উঠে এসেছে, বর্তমানে ১০২টি খাতে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি পাওয়ার তথ্য। এর মধ্যে ৪০টি খাতে ব্যক্তি করদাতাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাকীগুলোতে আংশিক বা পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে কোম্পানি, শিল্প বা বিনিয়োগের জন্য।
[৪] প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা আলোচ্য সময়ের জিডিপির ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কর অব্যাহতি পরিমাণ ছিল ৮৫ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যক্তি খাতে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা।
[৫] ব্যক্তি খাতের কর অব্যাহতির মধ্যে পোল্ট্রি খাতের করদাতারা কর অব্যাহতি পেয়েছেন ২ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এছাড়া ক্যাপিটাল গেইন ৯৮৫ কোটি টাকা এবং রেমিট্যান্সে কর অব্যাহতি ১১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
[৬] প্রাতিষ্ঠানিক বা সবচেয়ে বেশি কর্পোরেট কর অব্যাহতির মধ্যে রয়েছেÑ আইটি বা সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান, পোশাক খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, মাইক্রো ফাইন্যান্স ও ইকোনমিক জোন। এসব শিল্প সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি কর অব্যাহতি পেয়েছে। আইটিতে ১ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, পোশাক খাতে ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৮ হাজার ৩৮০ কোটি কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্রঋণ বা মাইক্রো ফাইন্যান্সে ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ও ইকোনমিক জোনে ৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
[৭] সূত্র জানায়, এনবিআর-এর প্রতিবেদনে কর অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে নন-অপারেটিং আয়ের ক্ষেত্রগুলো আলাদাভাবে বিবেচনা করা, অব্যাহতি যাতে অবারিত না হয় তা খেয়াল রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অব্যাহতির ক্ষেত্রে ট্রাস্টের কর্মপরিধি ও গঠন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা, কোম্পানির করদাতারা যেন কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর)-এর সুবিধার অপব্যবহার না করতে পারেÑ তা পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি যেসব আদেশের (সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ) মেয়াদ শেষ, সেগুলো বাতিলের সম্ভাব্যতাও যাচাইয়ের পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।