দক্ষ জনবলের অভাবে গতি বাড়ছে না ভূমি ডিজিটালাইজেশনে
সোহেল রহমান : [১] ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সহজতর করতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি সেবা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক ডিজিটাল ম্যাপ তৈরিতে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জনবলের তীব্র সঙ্কট রয়েছে। ফলে কাঙ্খিত পর্যায়ে বাড়ানো যাচ্ছে না ভূমি ডিজিটালাইজেশনের গতি। দক্ষ জনবল তৈরিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বড় পরিসরে প্রশিক্ষণ প্রদানে সক্ষম কোন প্রতিষ্ঠান না থাকায় মাঠ পর্যায়ের জনবলকেও স্বল্প সময়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। [২] ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দ্রুত ভূমি সেবা প্রদান ও ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব সার্কেল বাড়ানোর পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমি অফিস স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু নিয়োগবিধি না থাকার কারণে শূণ্য পদে জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জনবল সঙ্কট আরও প্রকট হচ্ছে।
[৩] সূত্র জানায়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর-এর পরিচালনা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প; মৌজা ও প্লটভিত্তিক ভূমি জোনিং প্রকল্প এবং ল্যান্ড অটোমেশন শীর্ষক তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ ডাটা সার্ভারে এন্ট্রি করা এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের জনবলকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও উপকরণ প্রদানের পাশাপাশি সফটওয়্যার অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আলোচ্য সময়ের মধ্যে ডিজিটাল সার্ভে কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হবে এবং অন-লাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, নামজারি ও পর্চা সরবরাহ কার্যক্রম আরও বেগবান ও আধুনিক করা হবে। [৪] সূত্র জানায়, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই শতভাগ অন-লাইনে ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি ও সায়রাত মহলসমূহ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ডিজিটাল তথ্য ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে। দেশের সকল উপজেলা/সার্কেল ভূমি অফিস ও সেসব অফিসের অধীনস্থ ইউনিয়ন ভূমি অফিসসমূহে শতভাগ ই-নামজারি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ভূমি বিষয়ক যে কোন অভিযোগ/পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে কল সেন্টার চালু করা হয়েছে। এ কল সেন্টারের মাধ্যমে ভূমি বিষয়ক সেবা (নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর) প্রদানের কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়েছে। [৫] সূত্র জানায়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বর্তমানে ১৯টি জোনে এবং ১টি দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন কর্মসূচীভুক্ত মোট ৩৯ হাজার ২৮০টি মৌজার ২ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৬৩৮টি খতিয়ানের স্বত্বলিপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রায় ৩ কোটি খতিয়ানের মাঠ জরিপের তসদিক স্তর সম্পন্ন হয়েছে। গত তিন বছরে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার মাধ্যমে ২ হাজার ৫৯০টি অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
[৬] ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য কর্ম-পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছেÑ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এবং ভূমির মালিকানা ও ব্যবহার আইন ২০২৩-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা; শতভাগ ই-মিউটেশনের মাধ্যমে নামজারি ও জমা খারিজের আবেদন নিষ্পত্তি করা এবং নামজারি পর্চা ডাটাবেজ তৈরি করা; ৮০টি মৌজার ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন করা এবং দেশব্যাপী প্রায় ৫০ লাখ আরএস খতিয়ান ওয়েবসাইটে আপলোড ও উন্মুক্ত করা।