
শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন উদ্যোগ সিপিডি বলছে এতে উদ্বেগের কিছু নেই, গার্মেন্ট মালিকদের উদ্বেগকে নাটক বলেছেন শ্রমিকরা

বিশ্বজিৎ দত্ত : [২] যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার আইন নিয়ে রপ্তানিকারকদের উদ্বেগ,থাকলেও গবেষণা সংস্থা সিপিডি মনে করছে রপ্তানিখাতে চলমান সংস্কারগুলো চালু থাকলে নতুন আইনে তেমন সমস্যা হবে না।
[৩] সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে শ্রমিকদের যে মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক লেবার অর্গানাইজেশন আইএলও ও প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপত্তি করেছে। সুতরাং শ্রমিকদের বেতন পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
[৪] তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলনে অনেক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। অনেকের নামে মামলা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও শ্রমিকদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন রয়েছে। তাতে একটি বিষয় পরিস্কার হবে যে আমরা শ্রমিক কল্যানে কাজ করছি। যদি এ বিষয়গুলোকে হালকাভাবে নিতে চাই তবে আমাদের রপ্তানিখাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আইন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
[৫] ড. মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, চাকুরি ও জীবনমানের বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনার কাজ করছে। এটি বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আইন কোন সমস্যার সৃষ্টি করবে না।
[৬] তাছাড়া রাণা প্লাজার ঘটনার পরে দেশের গার্মেন্ট শিল্পের কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়েছে। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের কাছে নিজেদের স্বক্ষমতার প্রমান দিয়েছি। দেশে কাজের মানের উন্নতি হয়েছে। এখন এই বিষয়টি ক্রমাগত উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমেরিকার নতুন নীতি ঘোষণার পর তা আরো বেগবান করতে হবে। মালিকরা আরো যত্নবান হবেন শ্রমীকের বিষয়ে ও কারখানার নানা সুযোগ সুবিধার বিষয়ে। বাংলাদেশের ধাপে ধাপে শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে শ্রম অধিকার ও এর চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।
[৭] অন্যদিকে গার্মেন্ট মালিকরা অনেকেই উদ্বেগের কথা বলেছেন, হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এ কে আজাদ গতকাল বলেছেন, ‘আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি চালান যায় যুক্তরাষ্ট্রে। আমাদের কারখানার পোশাক রপ্তানির বিষয়ে আমি উদ্বিগ্ন।সূত্র ডেইলি স্টার।
[৮] বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসানও একই মত দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মনে রাখা উচিত আফ্রিকা, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোয় শ্রম অধিকার নিয়ে প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও, তারা সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ অনেক বাণিজ্যিক সুবিধা দেয়।
[৯] বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, দেশে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না। সুতরাং উদ্বেগের কিছু নেই। ব্লিঙ্কেন শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক শ্রম অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন।
[১০] তবে গার্মেন্ট মালিকদের এই উদ্বেগের বিষয়টিকে নাটক বলেছেন অনেকেই। অনেক শ্রমিক নেতাই বলেন, তারা উদ্বেগের কথা বলে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। বরংচ তাদের উদ্বেগ হওয়া দরকার নতুন আইনে যাতে তাদের কারখানার শ্রমিকদের শ্রম অধিকারের কীভাবে উন্নত করা যায়। কীভাবে কত দ্রুত শ্রম অধিকারগুলো কারখানায় দিতে পারে তার জন্য তাদের উদ্যোগি হতে হবে। [১১] যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক দেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। গত অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর প্রায় ৯০ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক পণ্য।
[১২] বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, অধিকার ও উচ্চ শ্রমমান উন্নয়ন শীর্ষক প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম প্রকাশের সময় ব্লিঙ্কেন বলেন, যারা শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ, শ্রম অধিকারকর্মী ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে হুমকি দেয়, ভয় দেখায় ও আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে।’দোষীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, জরিমানা ও ভিসা বিধিনিষেধের মতো ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
