২০ খেলাপির কাছে পাওনা ৮ হাজার ৭৩৯ কোটি, আদায় মাত্র ১৬ কোটি টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : [১] খেলাপির ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে কঠোর হতে তাগাদা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রত্যেক বছরই খেলাপি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। বড় ঋণ খেলাপির কাছে অসহায় ব্যাংকগুলো। তবে ছোট খেলাপি ঋণগুলোর আদায়ের হার অনেক ভালো। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে নিয়ে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমনই চিত্রই ফুটে উঠেছে। [২] বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের জুনভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ৮ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত নগদ আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৮৭০ কোটি টাকা। কিন্তু খেলাপিরা ফেরত দিয়েছেন মাত্র ১৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২ শতাংশ। তবে উলটো চিত্র ছোট ও মাঝারি খেলাপির ক্ষেত্রে।
[৩] প্রতিবেদনে দেখা যায়, অপর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ৬ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। ৬ মাসে নগদ আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৬৮৫ কোটি টাকা। খেলাপিরা দিয়েছেন মাত্র ১২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২ শতাংশ। বিপরীতে অন্যান্য খেলাপি থেকে ব্যাংকটির পাওনা ৮ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্য ৮৫০ কোটি টাকা। আদায় ২০২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যের ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ এখানেও ছোটরা টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। [৪] তবে রূপালী ব্যাংকের আদায় সব থেকে ভালো হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। নগদ আদায়ের লক্ষ্য ৩৩৫ কোটি, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আদায় করেছে ৬৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৯ শতাংশ। একইভাবে অন্যান্য খেলাপির কাছে পাওনা ছিল ৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
[৫] শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ছিল ৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্য ৩০০ কোটি, আদায় করেছে ২৬ কোটি; যা লক্ষ্যমাত্রার ৯ শতাংশ। বিপরীতে অন্যান্য খেলাপি থেকে পাওনা ছিল ৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্য ৭০০ কোটি। আদায় ২৫১ কোটি, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ শতাংশ।
[৬] বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের অবলোপন করা ঋণের অঙ্ক ১৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো লক্ষ্যের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি। এ চার ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে আদায় করেছে মাত্র ৮৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপিদের শক্তি ব্যাংকের থেকে বেশি। এখন ব্যাংকাররা অনেকটা বড় ঋণখেলাপিদের দয়ার ওপর নির্ভরশীল। দয়া করে কিছু দিলে পেল, না দিলে কিছু করার নেই। এছাড়া বছরের পর বছর ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতিতে থাকা পুরো খাতের জন্য খারাপ বার্তা। এই অবস্থান দেখে বেড়িয়ে আসতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেই সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।