
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৪ বছরে বিদেশি তহবিল কমেছে ৭৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : [১] ২০২৩ সালের জুন শেষে এমএফআই’র মোট সোর্সেস অফ ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকায়। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের জুন শেষে এই ফান্ড বা তহবিলের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এই হিসেবে চার বছরে এই ফান্ডে কমেছে ৭৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
[২] রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) জুন, ২০২৩ সাল ভিত্তিক প্রকাশনার ওপর এক শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীমউল্লাহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমআরএ’র এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ।
[৩] বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এমএফআই) বিদেশি তহবিল (ফরেন ফান্ড) অস্বাভাবিকভাবে কমছে; অন্যদিকে, বাড়ছে বিদেশি ঋণ (ফরেন লোন)। [৩] বাংলাদেশ ক্ষুদ্রঋণ বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের জুন শেষে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই)-এর সোর্সেস অফ ফান্ডে বিদেশি তহবিলের অংশ ০.২ শতাংশ, যা ৩৪৪ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে এই ফান্ডের পরিমাণ ছিল ০.৬২ শতাংশ বা ৫৪৬ কোটি টাকা। ?২০২৩ সালের জুন শেষে এমএফআই’র মোট সোর্সেস অফ ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকায়। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের জুন শেষে এই ফান্ডের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা।
[৪] অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে অর্থ সচিব এমএফআই সেক্টরের ইতিবাচক ঘটনাগুলো তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ইতিবাচক উন্নয়নকে আরও অনুপ্রাণিত করতে আমাদের উচিত এই সেক্টরের সফল উদ্যোগগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরা। একইসঙ্গে তিনি এ খাতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা মোকাবেলা করে তাদের দুর্ভোগ কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
[৫] মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব হোসেন বলেন, আমাদের দেশে এক সময়ে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ফান্ডের অন্যতম উৎস ছিল ফারেন ফান্ড। এগুলো ফরেন এইড হিসেবেই আসতো। এখন আমাদের দেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগোচ্ছে, যার কারণে ফরেন ফান্ড কমছে।
[৬] তিনি আরও বলেন, ফারেন ফান্ড কমলেও সামগ্রিকভাবে আমাদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অডিটেডের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে বিদেশে এইড কমলেও ফরেন ঋণের পরিমাণ ব্যাপক বাড়ছে।
[৭] ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের এসেট এর মূল উৎস হলো– ক্লায়েন্টদের সঞ্চয়, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) থেকে ঋণ, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ, দাতা তহবিল, ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্ত এবং সরকারি ও বৈদেশিক ঋণসহ অন্যান্য তহবিল।
[৮] ২০২৩ সালের জুন শেষে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই)-এর অন্যান্য তহবিলের পরিমাণ ৯,০১৮ কোটি টাকা বা মোট ফান্ডের ৫.৬ শতাংশ। এই ফান্ডের মধ্যে একটি অংশ বিদেশি ঋণ । অথচ ২০১৯ সালের একই সময়ে এই ফান্ডের পরিমাণ ছিল ১,৫৭১ কোটি টাকা বা মোট ফান্ডের ১.৭৮ শতাংশ। এমআরএ’র এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা আর্থিক পরিষেবার বাইরেও প্রসারিত, কারণ আমরা সক্রিয়ভাবে ভ্যাক্সিনেশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করি।
[৯] তিনি বলেন, এমএফআই সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর আওতায় দ্রুতই ক্ষুদ্রঋণ ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (এমএফ-সিআইবি) গঠিত হতে চলেছে। বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই)-এর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩০ শতাংশ, একইসময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়েছে ২৫.১১ শতাংশ।
[১০] রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছেরের জুন শেষে ঋণ বিতরণ হয়েছে ২.৪৯ লাখ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১.৯১ লাখ কোটি টাকা। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০২৩ সালের জুন শেষে সেভিংস বা সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯ হাজার কোটি টাকা।
[১১] নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব হোসেন বলেন, ব্যাংকিং খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমলেও আমাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কারণ আমাদের প্রচার প্রচারণা অনেক বেশি হচ্ছে; একইসঙ্গে খুব সহজেই গ্রাহকদের জামানত ছাড়া ঋণ হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। এখন মানুষ ব্যাংকের যেতে ভয় পায়। অথচ ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে।
