ওয়াসি মাহীন
চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর অধীনে বিশ্বের প্রায় ১২৬টি দেশে চীন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করছে। ইকোনমিক পাওয়ারহাউজ হিসাবে চীনের এই উত্থান বিশ্বের কাছে বার্তা। বিশেষ করে আমেরিকার কাছে। আমেরিকাও বিশ্বের বহু দেশে সাহায্য করেছে। তবে সমস্যা হল দর্শনের। আমেরিকান দর্শনে তারা সাহায্যের বিপরীতে জুড়ে দিত হাজারো শর্ত। প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার আগে থেকেই শর্ত। আবার অনেক দেশে সাহায্যের নাম করে সরকার পতন, যুদ্ধ, তেল চুরি এমন কিছু নেই যা তারা করেনি।
কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে এটা একটু ভীন্ন। খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমেরিকার মত হস্তক্ষেপ করেছে। সরকার উৎখাত করেছে। সেনা পাঠিয়েছে। যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। চীন প্রভাব খাটায়নি সেটাও না। তবে সেটার ধরন ভীন্ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। অথবা তাইওয়ান ইস্যুতে সমর্থন চেয়েছে। অথবা ঋনের বিপরীতে অবকাঠামোর মালিকানায় অংশিদার হয়েছে। যদি আমেরিকার সাথে তুলনা করি তবে চীনের এই পলিসি বেশ ফলপ্রসু। এর কারন চীনের রয়েছে বিনিয়োগ করবার মত বিশাল উদ্বৃত্ত অর্থ। আমেরিকা যেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে ট্রিলিয়ন ডলার অপচয় করেছে, সেখানে চীন বাণিজ্যিক ভাবেই প্রভাব বলয় বৃদ্ধি করেছে। এতে ফলাফল পরিস্কার। আমেরিকার ইকোনমি ক্ষয়িষ্ণু হবার বিপরীতে চীন হয়ে উঠেছে বিশ্বের ম্যানুফ্যাকচারিং পাওয়ারহাউজ। সাপ্লাই চেইনের প্রধান উৎস। যেখানে সয়ং আমেরিকান কোম্পানি গুলিও কাঁচামালের জন্য চীনের উপর নির্ভরশীল।
আর এই দিকটিই আমেরিকার বিশ্ব রাজত্বকে আগামী বছরগুলিতে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। সম্প্রতি লিথুনিয়া, তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ায় চীন তাদের সাথে সম্পর্ক ডাউনগ্রেড করেছে। আমেরিকা হলে হয়ত যুদ্ধ বা সরকার পতন হতে পারত। কিন্তু চীন অর্থের অপচয়ে বিশ্বাসী নয় বরং বিনিয়োগে বিশ্বাসী।
বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক বেশ ভাল। ভবিষ্যতে এদেশের অন্যান্য নাক গলানো শক্তির প্রভাব চেক দিতে চীনের বিকল্প নেই। তবে আমাদের ও এগিয়ে যেতে হবে। বাণিজ্যিক ভাবেই। লেখক : ব্যাংকার