সোহেল রহমান
[১] বেসরকারি খাতে নির্মিতব্য দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ট্যারিফ অনুমোদন এবং ভারত থেকে সয়াবিন তেল আমদানিসহ ৭টি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৮ হাজার ২৬২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
[২] বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
[৩] বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দরপ্রস্তাব অনুমোদন এবং স্থাপিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করবে যৌথভাবে সিদ্দিক ফেব্রিক্স লিমিটেড, ইনটেক এনার্জিস ও সাউদিয়া জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড (এসএফ-এলই-এসজিপিপিএল)। প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা ২১.১০৫ টাকা হিসাবে ২৫ বছর এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারকে আনুমানিক ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
[৪] তিনি জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং স্থাপিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করবে যৌথভাবেÑ চীনা প্রতিষ্ঠান বিইআইএইচসিএল, বিজেডএইচই, ইএনএএম ও এমএনএস। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ১১.০০৫৮ টাকা হিসেবে ২০ বছর এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারকে আনুমানিক ৩ হাজার ৫৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
[৫] অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুই লিটার পেট বোতলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান গ্রীণ ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স এ তেল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫৪.২৯ টাকা।
[৬] তিনি জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় কাতার ও সৌদি আরব থেকে সার আমদানি এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে সার ক্রয়ের তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
[৭] তিন সার ক্রয়ের প্রস্তাবের মধ্যে কাতার-এর মুনতাজাত থেকে ৬ষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৭ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৮৩.৮৩ ডলার।
[৮] সৌদি আরব-এর সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৬ষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৭০.৮৩ ডলার।
[৯] কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৯ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ১২১ কোটি ৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৬৩.৬২৫ ডলার।
[১০] অতিরিক্ত সচিব জানান, এছাড়া বৈঠকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০২-এর পূর্ত কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এ কাজটি করবে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ১১২ কোটি ৮১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
[১১] তিনি জানান, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ভার্চুয়াল সভায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নন-ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি) আমদানিতে আরও ৩টি দেশের (চীন, মালয়েশিয়া ও জর্ডান) সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চুক্তির মাধ্যমে আমদানির প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত: বর্তমানে বিএডিসি ছয়টি দেশের (সৌদি আরব, মরক্কো, তিউনিশিয়া, কানাডা, রাশিয়া ও বেলারুশ) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নন-ইউরিয়া সার আমদানি করে থাকে।