ভোটের রাজনীতি, আমেরিকান কেবলা ও অর্থনীতির সম্ভাব্য ঝুঁকি
কাজী এম মুর্শেদ
ভোটের জোশ শুরু হয়ে গেছে, আবার আন্দোলনও চলছে। বড়ই অস্থির সময়। কারণ আন্দোলন কে করছে রাস্তায় তাই দেখলাম না। কাজের জন্য ওরফে পেটের ধান্দায় বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আবার বের হলে সমস্যা। সমস্যা আন্দোলনকারীদের থেকে না তাদের দেখা পাই না, বরং যারা আন্দোলন রুখে শান্তি নিশ্চিত করতে শান্তি মিছিল বের করে। এমন বাঁশ হাতে কি শান্তি ও উন্নয়ন আনে? সামনে সময় বেশ কয়দিন ব্যস্ত রাখার মতো, একদিকে সংলাপের প্রশ্নই নেই, অন্যদিকে সংলাপ হতেই পারে, আর মেজর আখতার খোলামেলা বলেই বসছেন, তাকে সরকার থেকে দায়িত্ব দেওয়া বিরোধী নেত্রীকে রাজি করানোর জন্য। সবই দেখি নিজের নিজের দিক দেখে কথা বলেন, আসল কেবলা কোনদিকে সেইটা বড় প্রশ্ন।
আপাতত আমেরিকা কেবলা, যেভাবে লেগে পরে আছে, একদম কাঁঠালের আঠা। আপনাদের মতো আমারও প্রশ্ন, আমেরিকার এই ছোট একটা দেশ নিয়ে উৎসাহের কারণ কী? ওয়াইল্ড গেইজ। কারণ সম্ভবত একটাই, এই অঞ্চল থেকে ভারত যেহেতু জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের সদস্য হতে চায়। আমেরিকা তা চায় না। অর্থনীতি যতো বড়ই হোক, এইটা সেটেল্ড ব্যাপার যে পাঁচ থেকে ছয় হতে দেবে না, কেউ না কেউ ভেটো দেবে। যুক্তি না মিললেও বলি, ভারতের প্রতিটি প্রতিবেশী তাদের উপর বিলা, এক সাদা পাখি বাংলাদেশ ছাড়া, সেই বাংলাদেশ আবার চীনের পিরিতের কালা পাখি। আমেরিকার কাজের ধাপগুলো দেখছি, মনে হচ্ছে তারা সব গুছিয়ে নিয়ে বসছে। এদের কাজ দেখেন, স্পেইডট্রাম্প খেলতে বসে সব স্পেইড হাতে। শুরু থেকে দেখেনÑ প্রথমে এলিট ফোর্স ধরলো, নিষিদ্ধ করে বসলো।
আমাদের এলিটফোর্সের কিছু দুর্নাম আছে, কিন্তু ওভারঅল এতোটা খারাপ না যে এমন নিষিদ্ধ হবে। এরপর আসেন পরের ইস্যু, সাধারণ নির্বাচন ইস্যুতে ভিসানীতি ঘোষণা। যেই সেই ভিসানীতি না, স্বপরিবারে ধরা খাওয়ার ভিসানীতি, কতো মানুষ এখনো ঘুম থেকে উঠে মেইল চেক করে, এম্বাসি থেকে মেইল আসছে কি না। এখানে আইনরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে রাজনীতিবিদ যোগ করা, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে। তার সঙ্গে যোগ হলো বিচারবিভাগ, বিচারিক আদালতের উপরেও ভিসানীতি হবে। এরপর বললো, টিভি/পত্রিকার সাংবাদিক নিয়ে। আমাদের মিডিয়া নিজ থেকেই হাত-পা ধরা লোকজন, কেউ সুযোগ নিতে বসা, কেউ সুযোগ না পেয়ে বসা। এম্বাসিতে যাও মদ খাও, কিন্তু ভিসানীতি থাকবে। বীর বাঙালি ভয় পায় না, তারপরও মিডিয়া ও তথাকথিত সিভিল সোসাইটি (এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজ) বিভিন্ন সাহসের বাণী দিয়েই যাচ্ছে। মাঝে আবার আমাদের পেটের ব্যবসার এলাকায় হাত দিলো, তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা একসময় বলে বসলো আমেরিকার কোম্পানি এথিক্যাল মজুরি দেয় না। ব্যাস, পরের ঘোষণায় তৈরি পোশাকের শ্রমিক নিয়ে ছোট একটা ঘণ্টা দিলো।
ঘণ্টা মানে শ্রম আইন না মানলে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা কি নিজেরাও জানি যে সব নিউজ সামনে আসে, সামাজিক মাধ্যমে আসে, মন্ত্রী মহোদয়রা বলেন, সবই যে তাদের হাতে থাকে? জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল উজ্জীবিত রাখতে কাকে দেশে রাখা হবে কী বের করে দেবে, প্রতিটা ব্যাপার বিগবস খেয়াল করছে। আমিরিকা মানে শুধু আমেরিকা না, এর সকল মিত্র রাষ্ট্রের নীতিমালা মেনে চলে। এখানেই আমরা ভুল করে বসছি। আমরা মানে রাজনীতিবিদদের মাইক্রোফোন। মাঝে ইউরোপীয়রা এসেছিলো, তারা শ্রম বাজার, সর্বনিম্ন মজুরি এসব দেখে কোনো কথা না বলে চলে গেছে। যা দেখার দেখে গেছে, এই সময়কার কথাগুলোও সাবধানে বলার কারও সময় হয়নি। সরকারের অন্যতম দুর্বল অংশ এই বেশি কথা বলা, কে কখন কী বাণী দিচ্ছে খেয়াল না রাখা। ইউরোপীয়রা জিএসপি প্লাসের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলো, বলেনি। সেই সময়টায় গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক মারা যাওয়া ছাড়াও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
আমি আগেও বলেছি, আবারো বলছি এবং বলবো, লড়াই হয় সমান সমান, আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট দেশ। আমাদের সক্ষমতা নাই যে বলবো তোমার যা ইচ্ছা করো, যাকে ইচ্ছা করো, এমনকি নিজেকেও করো। দিনে দিনে সমস্যার পাল্লা ভারী হচ্ছে, কয়েক লাখ তৈরি পোশাক ফেরত দিয়েছে। সামনে এখনো দুইটা বড় বিপর্যয় আছে, যদি আমেরিকা ও মিত্ররা তৈরি পোশাকে কোনো নিষেধাজ্ঞা বসায় বা শুল্কমুক্ত সুবিধা কমিয়ে বসে, আর শেষ অস্ত্র জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন। তবে আমার ধারণা, তিনটা কাজ সামনে করতে পারে। এক. দেশ থেকে যে টাকা পাচার হয়েছে, কানাডা আর আমেরিকার ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করলেই মাসকারা বা কামসারা হয়ে যাবে।
দুই. ভিসানীতির শুধু প্রয়োগ না, লিস্ট প্রকাশ করা যে কোন সব রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা, আইনরক্ষা বাহিনী, বিচারবিভাগীয় ব্যাক্তি, মিডিয়া ব্যাক্তি, ভুয়া সিভিল সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমেরিকার ভিসা পাবে না। সেই সঙ্গে তৃতীয় কাজ একটা করতে পারে, আমেরিকার বিভিন্ন ফান্ডিং, গ্লোবাল মানে বিশ্বব্যাংক, ইউএন, ইইউ, আইএমএফ ফান্ডিং, মিত্র দেশগুলোর যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার ফান্ডিং বন্ধ করা। বাংলাদেশের বাণিজ্য এমন কিছু না যে ট্রেড স্যাংশন দেবে। ফলাফল দেখেনÑ মামলা করে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল, আমির খসরু টাইপ লাইফ লাইনগুলো আটকে দিয়ে রিজভী টাইপের ট্রেড চালাতে দেবে, সেটা আবার কিনবেও না। হতাশ হয়েন না, নিজের চিন্তা যতদূর যায় বললাম। আমার লেখা পড়ে হতাশ হবার মতো পাঠক আজকাল বেশি পাই। মিরাকল স্টিল হ্যাপেনস, ভাইলোগ। লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক