টাকা নিয়ে কেন মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি করা হয়?
মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে একটি নির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে মনোনয়ন ফর্ম বিক্রয় শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দ মিছিল করে দলের নির্ধারিত স্থান থেকে এসকল মনোনয়নপত্র ক্রয় করছেন। যতটুকু জানা যায়, এসকল মনোনয়নপত্রের মূল্য অনেক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই নিয়ম শুরু থেকেই চলে আসছে। হয়তো এভাবেই চলবে অনন্তকাল পর্যন্ত। বিষয়টা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকরের মতো। কারণ এ ধরনের একটি অগণতান্ত্রিক ধারার পরিবর্তন আনতে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলই ইচ্ছা প্রকাশ করে না। কিন্তু কেন?
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য হাজার হাজার টাকা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের কাছে হয়তো তেমন কিছুই নয়। কারণ অর্থনৈতিক দিক থেকে বলতে গেলে তারা সকলেই অর্থশালী। এজন্য কোনো কোনো প্রার্থীকে একটি মনোনয়নপত্রের পরিবর্তে একাধিক ফ্রম ক্রয় করতে দেখা যায়। এই ফাঁকে দলগুলো আয় করছে কোটি কোটি টাকা। নির্বাচনের শুরুটাই যদি অর্থ প্রতিযোগিতার খেলা দিয়ে শুরু করা হয় তাহলে শেষটা নিশ্চয়ই ইতিবাচক হওয়ার কথা নয়। এই নিয়মের পরিবর্তনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন আজ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। করলে পরিবর্তন অবশ্যই আসতো। আশা করি আগামীতে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন কমিশন একটি সিদ্ধান্তে আসবে।
ইউরোপের কোনো দেশে নির্বাচনে কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী হতে হলে কোনো ‘ফি’ দিতে হয় নাষ দলের সদস্যপদ থাকলেই যে কেউ নিজেই সরাসরি মনোনয়ন চাইতে পারেনষ দলের বিভিন্ন শাখা থেকেও কোনো প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়ন চেয়ে মনোনয়ন কমিটির কাছে আবেদনপত্র পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। পরে দলের মনোনয়ন কমিটি যাদের যোগ্য মনে করবে তাদের প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার ও প্রার্থীর রাজনৈতিক সক্রিয়তা তথা যোগ্যতার উপর নির্ভর করে মনোনয়নের প্রস্তাব দিয়ে থাকে। এখানে দলীয় প্রধান কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটি হস্তক্ষেপ করে না।
নির্বাচনের পূর্বে প্রতিটি জেলা কমিটি স্ব স্ব জেলায় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য একটি মনোনয়ন কমিটি নির্বাচন করে। পরবর্তী সময়ে এই কমিটির কাছে দলীয় সদস্যরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবাদন করবেন। তারপর মনোনয়ন কমিটি প্রার্থীর কাছে একটি ই-মেইল দিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবে। প্রয়োজনে বাছাইকৃত প্রার্থীদের সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবেন। অবশেষে মনোনয়ন কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে ঘোষণা করবে। তবে মনোনয়ন কমিটির এই প্রস্তাবই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। পরে বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নির্বাচন কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন ব্রাঞ্চের প্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে প্রার্থীদের নাম তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সাধারণত বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই মনোনয়ন কমিটির রাখা প্রস্তাব প্রতিনিধিদের সমর্থন পেয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো সিরিয়ালি প্রার্থীর নাম তালিকা থেকে উপর নিচ হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, প্রমাণসহ সরকারি নথিপত্রে কোনো অভিযোগ ও রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক সদস্য পদ না থাকলে কেউ প্রার্থী হতে পারে না। এভাবেই প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে থাকে। কিন্তু প্রার্থিতার জন্য তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় না।
বাংলাদেশের প্রার্থী বাছাইয়ের নিয়ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে চলে টাকার খেলা। প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা খরচ করেন কোটি কোটি টাকা। যদিও নির্বাচন কমিশনে এক্ষেত্রে বাধা ধরা একটা নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা? জানি না নির্বাচনে অতিরিক্ত অর্থ খরচের কারণে এপর্যন্ত কতজন প্রার্থীকে দায়ী করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, প্রার্থীরা তাহলে এতো অর্থ খরচ করে কেন নির্বাচন করেন কেন? নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সকলেই নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের আদর্শ, দেশ ও এলাকার উন্নয়ন সহ নানা সমস্যা সমাধানের কথা প্রচারের পরিবর্তে দলীয় নেতা-নেত্রীদের তোষামোদি করেন? একটি গণতান্ত্রিক নিয়মে এ ধরনের প্রচার গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের কার্যকলাপ শুরু হয় সংসদ সদস্যদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে। সম্ভবত এ কারণেই অনেকে বিনিয়োগ করেন অঢেল অর্থ। প্রথমেই সংসদ সদস্যদের জন্য বিদেশ থেকে ‘ট্যাক্স ফ্রি’ গাড়ি কেনার সুযোগ দিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা। সংসদ সদস্যদের আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় না। নির্বাচনে যে অর্থ খরচ করা হয় তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ অর্থ সংসদ সদস্যরা মেয়াদকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত আয় করেন (সকলে নয়)। আর ক্ষমতার অপবেবহারের কথা না হয় নাই লিখলাম।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনের দিকে একবার ফিরে দেখা যাক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সময় জাতীয় সংসদে এমপিদের জন্য কোনো ‘ট্যাক্স ফ্রি’ গাড়ি কেনার নিয়ম থাকা তো দূরের কথা, অতিরিক্ত কোনো সুযোগ সুবিধা বলতে কিছুই ছিল না। বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার পর বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ শুনলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। তিনি কীভাবে গড়তে চেয়েছিলেন তার স্বপ্নের দেশ বাংলাদেশ আর আজ তার দল চলছে কীভাবে, কোন পথে?
আসছে নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমার অনুরোধ, প্রতিটি প্রার্থীর ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ জনসন্মুখে প্রকাশ করুন। প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পূর্বে সম্পদের পরিমাণ অনুযায়ী কর প্রদানে গাফিলতি থাকলে তাদের মনোনয়ন বন্ধ রাখুন। মামলা মকদ্দমার কিংবা আদালতের রায়ে দোষী ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া আগামী দিনে নির্বাচন কমিশন যেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রার্থীদের কাছ থেকে মনোনয়ন ফর্মের বিনিময়ে এই টাকা নেওয়ার নিয়ম বাতিল করে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে প্রথমেই সংসদ সদস্যদের ‘ট্যাক্স ফ্রি’ গাড়ি ক্রয়ের নিয়ম বন্ধ করুনষ যে দেশের মানুষ দরিদ্রসীমার এতো নিচে বসবাস করে সে দেশের জন প্রতিনিধিরা কী করে ট্যাক্স ফ্রি বিলাসবহুল গাড়ি কেনার সুযোগ পায় সেটাই আমার প্রশ্ন? সংসদ সদস্যদের বেতন সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কমিয়ে আনতে হবে এবং এই অর্থ সরকার দেশের জনগণের কল্যাণে ব্যয় করবেষ
ইলেকটেড জজ সিভিয়া আপিল কোর্ট (স্টকহল্ম), ইলেকটেড মেম্বার সুইডিশ লেফট পার্টি স্টকহোম ডিসট্রিক্ট ব্রাঞ্চ