সরকারকে ঋণ দেওয়া কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
আমিনুল ইসলাম:[১] টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা কমে ৭১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে স্থিতি কমেছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা।
[২] আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ি বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ছাপানো টাকায় ঋণ না দেয়ায় এ স্থিতি কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে স্থিতি বেড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের বেশিরভাগই সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও নন-ব্যাংক খাত থেকে নিয়েছে।
[৩] গত বছরের ১ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ না নিয়ে আগের ঋণ থেকে পরিশোধ করেছে ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
[৪] গত অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নেওয়ায় সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছিলো দেশের অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা। ফলে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদিকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কম, অন্যদিকে অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মকাণ্ডও সংকুচিত হয়েছে। এসব কারণে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমেছে। তাতে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমেছে কয়েক শতাংশ।
[৫] বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার যে ঋণ নেয়, সেটাকেই ছাপানো টাকায় ঋণ বলা হয়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা সৃষ্টি করতে পারে। ওই টাকায় ঋণ দেওয়া হয় সরকারের বিভিন্ন উপকরণ বন্ধক রেখে। একটি পর্যায়ে এসব ঋণ ট্রেজারি বিল আকারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে দেয়। তখন তা বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ হিসাবে চিহ্নিত হয়।
[৬] এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের কাছে লেখা এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ কমিয়ে দিতে। এর বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বন্ড মার্কেট থেকে প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে ঋণ নিতে। বন্ড মার্কেটকে এখনো চাঙা করা সম্ভব হয়নি। কারণ বন্ড কেনার জটিলতায় এ মার্কেটের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
[৭] এদিকে ২০২১ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২২ সালের ওই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। অক্টোবরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে ডিসেম্বরের মধ্যে এ হার ৮ শতাংশে নেমে আসবে। জুনের মধ্যে তা ৬ শতাংশে নামতে পারে।
[৮] বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছিল ১০ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের ওই সময়ে নতুন ঋণ না নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করেছে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।
[৯] নন-ব্যাংক খাত থেকে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে নিয়েছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে নিয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
[১০] উল্লেখ্য, দেশের নানান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক খাত থেকে বিভিন্ন উপায়ে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়ে থাকে। তবে গত অর্থবছরে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি ঝুঁকেছিলো সরকার। তবে সময়ের আবর্তনে সরকারকে ঋণ দেওয়া কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।