বিশ্ববাজারে আবারও জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশে কমছে না
মাসুদ মিয়া: [১] বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবারও কমলেও দেশে বাজারে কমছে না। জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে অনেক কিছুর সম্পর্ক আছে। সে জন্য তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ব্যয় এবং শিল্প, কৃষি ও বিদ্যুৎ সবকিছুর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। কেবল বাংলাদেশই নয়, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও বিপদে পড়েছিল।
[২]গতকাল শুক্রবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম কমেছে। মূলত ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো আবারও তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে বাজারে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় তেলের দাম কমেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, গতকাল সকালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ৬ সেন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমে ৮১ দশমিক ৩৬ ডলারে নেমে এসেছে, আগের অধিবেশনে এই তেলের দাম কমেছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
সেই সঙ্গে ইউএস ওয়েস্ট টেক্সেস ইন্টারমিডিয়েট বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম ৬৬ সেন্ট বা ০.৮৬ শতাংশ কমে ৭৬.৪৪ ডলারে নেমে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ছুটি থাকায় তেল কেনাবেচা হয়নি, এর ফলে এই তুলনা গত বুধবারের সঙ্গে গতকাল সকালের।
[৩]বিষয়টি হলো, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠক চার দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে; মূলত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো উৎপাদনের বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে না পারার কারণে বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শুরু হবে ৩০ নভেম্বর। এ ঘোষণায় বাজার কিছুটা বিস্মিত হয়েছে। সিডনিভিত্তিক বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা আইজির টনি [৪]সিকামোর এক নোটে বলেছেন, খুব সম্ভবত এখন যে উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত কার্যকর আছে, তারই সম্প্রসারণ হবে, এর বেশি কিছু নয়।
ওপেক হঠাৎ বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার কারণে বুধবার ব্রেন্ট ফিউচারের দাম ৪ শতাংশ ও ডব্লিউটিআই ফিউচারের দাম ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকস গিভিংয়ের ছুটি থাকায় গতকাল তেল কেনাবেচা কিছুটা কমেছে।
এদিকে চীনের অর্থনীতি নিয়ে বাজারে একধরনের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। বাজারবিশ্লেষকেরা বলছেন, সম্প্রতি চীনের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান এবং দেশটির ঋণগ্রস্ত আবাসন কোম্পানিগুলোকে সরকারের নতুন করে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি তেলের বাজারের জন্য ইতিবাচক রয়েছে।
[৫] এদিকে চীন সরকার আবাসন খাতে আরও প্রণোদনা দেবে, এই আশাবাদ থেকে গতকাল চীনের স্টক মার্কেট ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুত বেড়ে যাওয়া এবং পরিশোধনের মুনাফা কমে যাওয়ায় বাজারে তার প্রভাব তেমন একটা পড়বে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে চীনের অর্থনীতি নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না বিশ্লেষকেরা। চীনের আবাসন খাতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, তার কারণে ডিজেলের ব্যবহার কমে যেতে পারে। ওপেকবহির্ভূত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে নানামুখী ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে বাজারে তেলের সরবরাহ বেড়ে যাবে।
[৬]বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের বাজারের দাম সমন্বয় করা উচিত মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে অনেক কিছুর সম্পর্ক আছে। সে জন্য তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ব্যয় এবং শিল্প, কৃষি ও বিদ্যুৎ সবকিছুর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। জ্বালানি তেলের দাম কমলে সব কিছুর দাম কমে যাবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্টরার বলেন, কেবল বাংলাদেশই নয়, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও বিপদে পড়েছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে তো গত বছর মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার রেকর্ড করে। কিন্তু তারা নীতি সুদহার বাড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, যা বাংলাদেশ পারছে না।
এদিকে দেশে সব সময়ই দেখা যায়, জ্বালানির দাম বাড়াতে বা কমাতে সরকার বেশ কিছুটা সময় নেয়। এর কারণ হলো দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেল সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়।