রপ্তানিমুখী শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার কমেছে
সোহেল রহমান : [১] চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানিমুখী শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার কমেছে। ফলে তিন মাসে সরকারের প্রায় ৫০ শতাংশ সাশ্রয় হয়েছে। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
[২] জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, তিন মাসে যে পরিমাণ আর্থিক (১৪৫ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা) সাশ্রয় হয়েছে, পুরো অর্থবছরে যদি একই হারে হয়, তাহলে ৫৮০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। তবে এটি একটি প্রাথমিক হিসাব এবং এর ভিত্তিতে এনবিআর একটি ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছে যে, অর্থবছর কী পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হতে পারে।
[৩] সূত্র মতে, এ হিসাব প্রণয়নে স্থানীয় রপ্তানি (যা ডাবল কাউন্ট হিসেবেও পরিচিত এবং হোম কনজাম্পশন বন্ড)-এর হিসাব বাদ দেয়া হয়েছে। পুরো বছরের হিসাবে এই পরিমাণ কমবেশি হতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে এনবিআর নিশ্চিত হয়েছে যে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ব্যাপকহারে কমছে।
[৪] সূত্র জানায়, সফলভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি এনবিআর-এর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের সক্ষমতা বাড়ার কারণে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার কমেছে। শুল্ক বিভাগের সফটওয়্যার এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড-এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য পরীক্ষা ও নজরদারি করতে পারছে রাজস্ব বোর্ড। গত দুই বছর ধরে কাস্টমস বিভাগ নিজস্ব এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়ার-এ থাকা তথ্য, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, রপ্তানিকারকদের সংগঠনের দেয়া ইউটিলিটি ডিক্লারেশনের (ইউডি) তথ্যসহ অন্যান্য আমদানি-রপ্তানির নথি পরীক্ষা করে শতাধিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বের করেছে।
[৫] সূত্র জানায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্ড সুবিধার আওতায় কাঁচামাল আমদানিতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব ছাড় দিয়েছিল সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে যে পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি হয়েছে এবং তা দিয়ে তৈরি যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মধ্যে ব্যবধান ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ে যা ছিল ৪০ শতাংশ এবং দুই বছর আগের একই সময়ে ছিল ৪৫ শতাংশ।
[৬] সূত্র মতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বন্ড সুবিধায় বিভিন্ন ধরণের কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ মেট্রিক টনের কিছু বেশি এবং একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩০ হাজার টন। অর্থাৎ একই সময়ে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান ছিল প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন।
[৭] চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১০ লাখ ১৮ হাজার টন এর কাছাকাছি আমদানি হয়েছে এবং রপ্তানি হয়েছে ৮ লাখ টনের কাছাকাছি, যা আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান কমে আসা নির্দেশ করছে।
[৮] সূত্র মতে, ব্যবধান কমার অর্থ হচ্ছেÑ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি সংকুচিত হবে। ফলে কমার্শিয়াল বা ট্যাক্স পরিশোধ করে আমদানি করতে হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।
[৯] জানা যায়, সারাদেশে প্রায় ৮ হাজার বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে সক্রিয় রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী সক্ষম করতে সরকার কাঁচামাল আমদানির ওপর কর মওকুফ করে আসছে। সেক্ষেত্রে শর্ত হলো, আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্দিষ্ট ওয়্যারহাউজে রেখে তা দিয়ে তৈরি পণ্য পুরোটাই রপ্তানি করতে হবে। এটি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ফ্যাসিলিটি নামে পরিচিত, যা ১৯৮০-এর দশক থেকে দিয়ে আসছে সরকার।
[১০] অন্যদিকে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধা ছাড়া কাঁচামাল আমদানি করতে হলে প্রায় ৫০ শতাংশ কর দিতে হয় আমদানিকারকদের। কিন্তু, কাঁচামাল আমদানির পরে স্থানীয় যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি করতে পারে না, তাদের কাছে বিক্রি করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, আমদানিকারকরা এ সুবিধার অপব্যবহার করে থাকেন।