ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৫.৮২ বিলিয়ন ডলার
মো. আখতারুজ্জামান : [১] ২০২১ সালের আগস্টে মোট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। পরে ইউক্রেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। সেই ধারাবাহিকতা এখনও চলমান রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে রির্জাভ। বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ এসে ঠেকেছে ১৫.৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
[২] আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় না বাড়ায় রিজার্ভ কমছে। সেইসঙ্গে প্রবাসী আয়ও আগের তুলনায় কমায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
[৩] আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য রীতি অনুযায়ী, সাধারণত কোনো দেশের হাতে তিন মাসের বৈদেশিক মুদ্রার দায় মেটানোর মতো মজুত থাকতে হয়।
[৪] বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা তথ্যে জানানো হয়েছে, গত বুধবার পর্যন্ত বিপিএম৬ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। সেদিন মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। গত সপ্তাহে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেলেও বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা আবার বেড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের অর্থ বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ করে রেখেছে।
[৫] ব্যাংকাররা বলছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি, ভোগ্যপণ্য ও পরিবহন খাতে খরচ বেড়েছে। ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও আমদানি ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ না বাড়ায় তৈরি হয়েছে রিজার্ভ সংকট।
[৬] এদিকে, আইএমএফ’র নিট হিসাব অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবের ১৯.৫৩ বিলিয়ন ডলার থেকে আরও বাদ যাবে প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
[৭] আইএমএফ’র সদস্য হওয়ায় এসডিআর অ্যালোকেশন বাবদ বাদ যাবে ২ বিলিয়ন ডলার। দেশের ব্যাংকগুলোর এফসি ক্লিনিং অ্যাকাউন্টের ৯৩৭ মিলিয়ন, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (এসিইউ)-এর সদস্য দেশগুলো থেকে আমদানি বাবদ (এখন পর্যন্ত) ৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পেমেন্ট এবং এক বছরের মধ্যে আইএমএফের প্রোজেক্ট পেমেন্ট বাবদ ৩২৬ মিলিয়ন ডলার বাদ দিলে দেশের প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে ১৫.৮২ বিলিয়ন ডলারে।
[৮] উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৩ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে তা ১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা কম ছিল। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে বৈশ্বিক মন্দা হলে রিজার্ভ ৭ বিলিয়ন থেকে কমে ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
[৯] এরপর তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং কোভিডের কারণে আমদানি কমে প্রবাসী আয়ে বড় উত্থান হলে ২০২১ সালের আগস্টে মোট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে এরপরের বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হলে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে একাধারে কমছে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।