স্বর্ণের দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভালো মানের এক ভরি এক লাখ ১০ হাজার টাকা
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের বাজারে আবার স্বর্ণের বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে রয়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনা দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার টাকা। এর আগে কখনো দেশের বাজারে স্বর্ণের এত দাম হয়নি। দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের এটিই সর্বোচ্চ দাম। স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা সোনা) দাম বাড়ায় পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই দাম কার্যকর হয়েছে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
[২]এর আগে গত ২৭ নভেম্বর আর এক দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। অর্থাৎ তিনদিনে দুদফা স্বর্ণের দাম। তার আগে ৬ ও ১৯ নভেম্বর ও ২৭ অক্টোবার আরও তিন দফা বাড়ে সোনার দাম। ২৭ নভেম্বর ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়ানো হয়। এতে এই মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয় এক লাখ ৮ হাজার ১২৫ টাকা। এর মাধ্যমে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে সোনার দাম।
[৩]স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ার তিনদিনের মাথায় এই ধাতুটির দাম আরও বেড়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলো। বুধবার বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম বেড়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। [৪]নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৬৩৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৮৫৯ টাকা। এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৪৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ হাজার ৯২৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ২২৫ টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ৯৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
[৫] এখন স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম এক হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক হাজার ৬৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রূপা এক হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১ কোটি হওয়া উচিত : এনবিআর চেয়ারম্যান
সোহেল রহমান : [১] এ মুহূর্তে দেশে আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১ কোটি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম।
[২] আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা কোটিতে উন্নীত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন জমা দেন।
[৩] জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার এনবিআর-এর মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত নতুন আয়কর আইন এবং কর পরিপালন: পরিবর্তিত প্রেক্ষিত শীর্ষক এক সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
[৪] তিনি বলেন, আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বাড়াতে টিআরপি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের পক্ষে করদাতাদের সাহায্য করবে। আর আমরা কেন কর দেব? সেজন্য মটিভেশন করতে হবে। আপনি কর দেবেন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে। রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন করের টাকায়। সেটি মানুষকে বোঝাতে হবে।
[৫] প্রসঙ্গক্রমে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর প্রদানের বিষয়টিকে করদাতারা বোঝা মনে করেন। করদাতারা মনে করেন রাষ্ট্র অন্যায়ভাবে কর আদায় করছে কিংবা অন্যায়ভাবে এটা চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা করদাতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। আয়কর আদায় নয়, আহরণ করতে চাই। কর ভীতিকেও নজর দিতে হবে। আমরা করদাতাদের বিশ্বাস করাতে চাই, কিন্তু করদাতাদেরও সে বিশ্বাসের জায়গাটাকে রাখতে হবে। করদাতাকেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। সবাইকে ধরে ধরে বাধ্য করা যাবে না।
[৬] তিনি আরও বলেন, আয়কর আইন বাংলায় করতে অনেক স্টেকহোল্ডারেরর সঙ্গে আলোচনা করেছি। এরপরও সমালোচনা আছে। আমরাও বেশ কিছু জটিলতা পেয়েছি। ত্রুটি আছে, সমাধানও আছে। শুধুমাত্র বাজেটের সময় নয়, অন্যান্য সময়ও আইন সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।
[৭] সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর নীতি বিভাগের সদস্য ড. সামস উদ্দিন আহমেদ।
[৮] মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিভিন্ন জরিপের ভিত্তিতে আমাদের ধারণা ৬৫ থেকে ৭০ লাখ ব্যক্তি প্রত্যক্ষ করের আওতায় আসা উচিত। কিন্তু আমরা পাচ্ছি এর অর্ধেক। অর্থাৎ কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের করজালে আওতায় আনতে পারলে আয়কর রিটার্ন জমা ৫০ শতাংশের বেশি উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।
[৯] সেমিনারে বলা হয়, কর পরিপালন বিষয়ে করদাতার আচরণ পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তন তত্ত্বের আবির্ভাব হয়েছে। করদাতা ও রাজস্ব প্রশাসনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কর-সেবা উন্নততর করা সম্ভব। রাজস্ব প্রশাসনের কী কী আচরণের ফলশ্রুতিতে একজন করদাতার আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব Ñতা পর্যবেক্ষণ করা যায়। এ পরিবর্তনের মাধ্যমে রাজস্ব প্রশাসন ও করদাতার মানসিক সমঝোতা সৃষ্টি করে স্বেচ্ছাকর পরিপালন এবং রাজস্ব আদায়ে কাঙ্খিত গতিশীলতা আনয়ন সম্ভব।