বাড়তি চাল ডাল চিনি আটা ময়দা পেঁয়াজ রসুন আদার দাম গরুর মাংস, মুরগি ও ডিমের দাম কমেছে
মাসুদ মিয়া : [১] আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সামনে রেখে বেশ কয়েটি নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। জাতীয় নির্বাচন আমামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে রাজধানীতে শীতের সবজি ভরপুর থাকায় সবজির দাম কমেছে পাশাপশি বাজারে মাছ-মাংস-ডিমের দাম কমে এলেও এখনো চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, ভোজ্যতেলসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্য। পেঁয়াজ, রসুন ও আদার মতো পণ্যের দামে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে বাজারে গরুর মাংসসহ কমেছে মুরগি মাছ ডিমের দাম। দীর্ঘ সময় পরে এ নিম্নমুখী প্রবণতায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে ক্রেতারা।
[২] গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখাগেলে। এদিকে চলতি বছরের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। তাতে চালের বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। মোটা চালের দাম আগের মতো রয়েছে। প্রতি কেজি মোটা চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। অর্থাৎ নতুন চাল বাজারে এলেও মাসখানেক আগে যে খুচরা পর্যায়ে সবধরনের চালের দর কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছিল, এখনও সেই দরেই বিক্রি হচ্ছে।
[৩] এদিকে বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়ায় আটা ও ময়দার দামও বেড়েছে। খোলা আটা কিনতে এখন ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে কেজিতে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আর প্যাকেট আটার কেজি কিনতে খরচ হচ্ছে কমবেশি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ এবং প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
[৪] এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিতিশীল চিনির বাজারে কোনো সুখবর নেই। খোলা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। অন্যদিকে বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ নাই বললেই চলে। মিললে তার জন্য গুনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।
[৫] স্বস্তির বাজারে ক্রেতাদের টানছে গরুর মাংস। এখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানে ৬০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়, যা এক মাস আগের চেয়ে কেজিতে দেড়শ টাকা থেকে ২০০ টাকা কম। কয়েকদিন আগেও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০- ৮০০ টাকা কেজি দরে। সে সময় গো-খাদ্যের বেশি দাম, হাট ও পরিবহনে চাঁদাবাজির মতো নানা যুক্তি হাজির করতেন ব্যবসায়ীরা।
[৬] গত এক সপ্তাহে কয়েক দফায় দাম কমে এখন বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০ টাকা করে। খামারি এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬০০ টাকা দামে গরুর মাংস বিক্রি করেও তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে না। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে গরুর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় আরো কম দামে বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক লাভ থাকবে।
[৭] রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, গরুর মাংসের দোকানে এখন রীতিমতো দাম কমানোর প্রতিযোগিতা চলছে। কোনো দোকানে ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হলে পাশের দোকানে ক্রেতাদের ডেকে এনে ৫৮০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছে। কোথাও কোথাও দোকানিরা দাম কমার সাইনবোর্ড লাগাচ্ছেন। এতে দোকানে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
[৮] বিক্রেতাদের মতে, বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাবে অতিরিক্ত মুনাফা করতে গিয়ে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর কারণে এখন তারা কাক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে এখন কম দামেই মাংস বিক্রি করছেন। তবে কম দামে বিক্রি করলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাদের কোনো লোকসান হচ্ছে না।
[৯] সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরুর মাংসের চাহিদা বাংলাদেশে কখনও কম ছিল না। কিন্তু দাম ৭৫০ বা ৮০০ টাকা হয়ে যাওয়ার পর স্বল্প আয়ের মানুষদের পক্ষে তা নিয়মিত কেনা সম্ভব ছিল না। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায় একটি শক্তিশালী চক্র অতিমুনাফা করতে মাংসের দাম বাড়িয়েছিল। এখন বিক্রি কমায় নিজেরাই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ফলে দাম কমিয়ে বিক্রি করছে। যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতেও তারা বাড়তি মুনাফা করছে।
[১০] গরুর মাংসের পাশাপাশি দাম কমেছে মুরগির। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাদা ও বাদামি রঙের ডিমের ডজন পাওয়া যাচ্ছে যথাক্রমে ১১০ ও ১২০ টাকার মধ্যে।
[১১] বাজারে এখন মাছের সরবরাহ ভালো। তাছাড়া মাংসের দাম কমার প্রভাবও পড়েছে মাছের দামে। বেশি কমেছে চাষের মাছে। মাঝারি মানের চাষের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। বড় আকারের চাষের তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আর মান ও আকারভেদে চাষের রুই মাছের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। তবে চিংড়ির দাম তেমন কমেনি। প্রতি কেজি কিনতে এখনও গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা।
[১২] অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২টাকা করে নির্ধারণ করা হয় সেই সময়, যখন বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ১৩ টাকা ছিল। এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রথম ডিম আমদানির অনুমতিও দেয়। এরপর থেকে ক্রমাগত কমে এখন প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকায় নেমেছে।
[১৩] পাড়া মহল্লার দোকান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১২০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি ১০ টাকা পিস। পাইকারিতে দরদাম করে ১১৫ টাকাও কেনা যাচ্ছে। তবে পাড়া মহল্লার একদম খুচরা দোকানে এখনো বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন আব বাংলাদেশের তথ্য বলছে, গত একমাসে বাজারে ডিমের দাম সাড়ে ২১ শতাংশ কমেছে। গত মাসে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, যা এখন ৩৭ থেকে ৪৩ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
[১৪] গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর ও মালিবাগ বাজার ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকায় নেমে আসায় অন্যান্য মাংস, মাছ ও ডিমের দাম কিছুটা নেমে এসেছে। সাদা ও বাদামি রঙের ডিমের ডজন এখন ১২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি নেমেছে ১৭০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি পড়ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা।
[১৫] পেঁয়াজ, রসুন ও আদার বাজারে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। তাতে আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে কম। চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে পেঁয়াজ এসেছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন।
[১৬] রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পেঁয়াজপাতা ৫০ টাকা, পটোল ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
[১৭] এছাড়া শিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, আলু ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ থেকে ৮০ টাকা, নতুন আলু ৯০ টাকা ও শালগম বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর প্রতিপিস ফুলকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, বাজারে লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা ও লাউ শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
[১৮] বিক্রেতারা বলছেন, চলতি সপ্তাহে সব ধরনের শাক-সবজির দাম কমেছে। মূলত শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতির দিকে।
[১৯] রাজধানীর মতিঝিল বাজারের ক্রেতা সাইফুল বলেন, এখন কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমলেও কিছু পণ্যেও দাম বেড়েছে। মাঝে মধ্যে কোনো পণ্যের দাম একটু কমলে তাই ভালোই লাগে। তবে মাছ-মাংস ডিমের দাম কমেছে এটা ভালো। সব কিছুর দাম যদি কমে যেত তাহলে আরও ভালো হতো।