গত সাড়ে ১৪ বছরে বেড়েছে দুই লাখেরও বেশি ব্যাংক খাতে কোটিপতি আড়াই লাখ
সোহেল রহমান : [১] কোভিড-১৯ মহামারি, বৈশ্বিক মন্দা ও দেশের অভ্যন্তরীণ টাল-মাটাল পরিস্থিতিতেও দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে। চলতি পঞ্জিকা বছরের গত জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে ১ কোটি টাকার অধিক হিসাবধারীর (আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা) সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৯। এর মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার ৩২০ জন কোটিপতি বেড়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৪ বছরে। সে হিসাবে বছরওয়ারি গড়ে কোটিপতি বেড়েছে ১৪ হাজার ১৬০ জন। তবে এটা শুধু রেকর্ডেড সংখ্যা, এর বাইরেও বহু কোটিপতি আছেন এবং তাদের অর্থেরও কোন সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। [২] প্রসঙ্গত: বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংক খাতে মোট কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৩৬৯ জন। সে হিসাবে গত সাড়ে ১৪ বছরের ব্যবধানে দেশের ব্যাংক খাতে মোট কোটিপতি বেড়েছে সাড়ে চারগুণের বেশি।
[৩] বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে ১ কোটি টাকার অধিক আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ জন। গত ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে মোট কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ জন।
[৪] অন্যদিকে গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫ জন। গত ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন।
[৫] পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদ (২০০৯-২০১৩) শেষে ব্যাংক খাতে মোট কোটিপতির (আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা) সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ৫৯১ জন (প্রথম পাঁচ বছরে বেড়েছে ৫৪,২২২ জন); দ্বিতীয় মেয়াদে (২০১৪-২০১৮) মোট কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২৮ জন (দ্বিতীয় পাঁচ বছরে বেড়েছে ৬৮,১৩৭ জন) এবং সর্বশেষ তৃতীয় মেয়াদের প্রথম সাড়ে চার বছরে (২০১৯-জুন ২০২৩) মোট কোটিপতি বেড়েছে ৮২ হাজার ৯৬১ জন।
[৬] ব্যাংকভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে (ইসলামিক ব্যাংকসহ) কোটিপতির (আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা) সংখ্যা বেশি। প্রায় আড়াই লাখ কোটিপতির মধ্যে ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৩টি হিসাবধারীই রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৯২০ জন এবং এক কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৩ জন। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকগুলোতে মোট কোটিপতির সংখ্যা ৬২ হাজার ৭৮০ জন (আমানতকারী ২০,৩৮৩ জন ও ঋণগ্রহীতা ৪২,৪৯৭ জন)।
[৭] অন্যদিকে দেশের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে মোট কোটিপতির (আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা) সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৪০ জন। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৬৮ জন এবং ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৭২ জন।
[৮] পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে ব্যবসারত বিদেশি ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেশি। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে মোট কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা হচ্ছে ১০ হাজার ৫৬৩টি। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫১০ জন এবং ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৪ হাজার ৫৩ জন।
[৯] অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে মোট কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ৩ হাজার ৭৩৩টি। এর মধ্যে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬ জন এবং ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৬৭৭ জন।