কমেছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ পোশাক রপ্তানি কমায় প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে
মো. আখতারুজ্জামান : [১] দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে। চলতি বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আয় এসেছে ৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের নভেম্বরে যা ছিল ৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ কমেছে। সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এ তথ্য জানিয়েছে।
[২] টানা দুই মাস পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির গতিও কমে গেছে। চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে (জুলাই–অক্টোবর) পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ।[৩] কিন্তু নভেম্বর মাসে রপ্তানি কমায় পাঁচ মাসের হিসাবে (জুলাই–নভেম্বর) প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত জুলাই–নভেম্বর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২২৩ কোটি ডলারের পণ্য।
[৪] পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান আজ সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
[৫] ইপিবির তথ্যে দেয়া যায়, তৈরি পোশাক ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ইত্যাদি।
[৬] ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাকের রপ্তানি ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে ওভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ।
[৭] সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানির এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় আছে। এ ক্ষেত্রে এককভাবে তৈরি পোশাক খাতের অবদান প্রায় ৮৫ শতাংশ।
[৮] জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে পোশাক রপ্তানি ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে ১৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার এসেছে নিটওয়্যার পণ্য (গেঞ্জি, টি-শার্ট) রপ্তানি থেকে। যার প্রবৃদ্ধি ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। বাকি ৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে ওভেন পণ্য রপ্তানি থেকে। এর প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
[৯] তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান জানান, পোশাক সামগ্রীর রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে গত সেপ্টেম্বর থেকে। গার্মেন্টস পণ্যের চালান আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ন্ত থাকবে। কারণ এর মধ্যে আমরা বিভিন্ন খুচরা ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে বাড়তি কার্যাদেশ বুক করেছি।
[১০] বিজিএমইএ সভাপতির আশাবাদ, চলতি অর্থবছরের শেষে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি গত অর্থবছরের তুলনায় অন্তত ৩০ শতাংশ বাড়বে।
[১১] কম্পিটিটিভ প্রাইস অফারের কারণে ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলো থেকে অর্ডার স্থানান্তরিত হওয়ায় গত বছরজুড়ে বাংলাদেশের স্থানীয় সরবরাহকারীরা ২০ শতাংশ বেশি কার্যাদেশ পেয়েছেন। সামগ্রিকভাবে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৯ ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।
[১২] এর মধ্যে হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের চালান ২৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে ২৮৬ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। কৃষিজাত পণ্য ও সবজি রপ্তানি ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে ৫৫৬ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯০ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলারের, যা ২৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
এদিকে একই সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪৫৬ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারের। বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর তুলা ও সুতার চালান ৩৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে ৮০ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
[১৩] রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে ২০ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলারের টেরি টাওয়েল রপ্তানি হয়েছে। বেড়েছে ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জুতা (চামড়াজাত নয়) রপ্তানি হয়েছে ১৭৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।
[১৪] তবে এই ৫ মাসের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি তেমন ভালো ছিল না। এটি ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ৪৫৬ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। হওয়ার কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির প্রবণতা অপেক্ষাকৃত ভালোর দিকে আছে।