তিন বছরের প্রকল্প ১০ বছরের শেষ হয়নি গুলশান লেক উন্নয়ন ব্যয় ১৪৩ কোটি বেড়ে ৫৫৪ কোটি টাকায়
এস.ইসলাম জয় : [১] রাজধানীর পরিবেশগত উন্নয়ন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ১৪৩ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৫৫৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
[২] কিন্তু তিন বছরের প্রকল্প ১০ বছর পেরোলেও এখন শেষ হয়নি এ প্রকল্পের কাজ। বিভিন্ন জটিলতায় আটকে আছে দীর্ঘ ১৩ বছর। অথচ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃক্ষের হাতে (রাজউক) নেওয়া এ প্রকল্পটির মেয়াদ ছিলো মাত্র তিন বছর।
[২] পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৪১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যেখানে সরকারের অর্থায়ন (জিওবি) থাকবে ৩১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ৯৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথম দফায় সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এতে সরকার ব্যয় বহন করবে ৩১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থ ব্যয় করবে ২৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
[৪] সূত্র জানায়, চলতি বছর নভেম্বরের ১৯ তারিখ পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
[৫] সভায় প্রকল্প সংশোধনের কারণ জানতে চাইলে রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৪১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ২০১০ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির আন্ত:অঙ্গ ব্যয় সমন্বয় গৃহহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। কিন্তু বিভিন্ন অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রথম সংশোধন ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হলে ২০১৭ সালের মার্চের ১৫ তারিখ পিইসি সভা হয়।
[৬] সভায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষার আলোকে ডিপিপিতে ২২টি নতুন অঙ্গ অর্ন্তভূক্ত করে ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালে ফের পিইসি সভা হয়।
[৭] এদিকে, কড়াইল বস্তি থেকে কত পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের পুর্নবাসন কোথায় করা হবে তা বিবেচনায় রেখে একনেক সভায় প্রকল্পের প্রথম সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়নি। পরে ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসন পরিকল্পনায় ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম সংশোধিত পরিকল্পনা কমিশনের ডিপিপিতে পাঠানো হয়। তার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্প অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
[৮] সংশোধনী প্রস্তাবের কলেবর ও প্রাক্কলিত ব্যয় অধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিরুপণের লক্ষ্যে গৃহহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যয়বহুল অঙ্গসমূহ বাদ দিয়ে একান্ত প্রয়োজনীয় ভুমি অধিগ্রহনের সংস্থান রেখে ৫৫৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিপিপিতে প্রণয়নের প্রস্তাব দেয়।
[৯] রাজউক জানায়, অনুমোদিত মূল ডিপিপিতে ভুমি অধিগ্রহনের পরিমাণ ছিলো ৮০.১০ একর। ২০১৭ সালে পিইসি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষা অনুযায়ী সংশোধিত ডিপিপিতে ৮২.৫৬ একর জমি প্রস্তাব করা হয়। এরমধ্যে ৪৩ একর জমি টিএন্ডটি আওতাভুক্ত এবং মালিকানাধীন ৩৯.৫৬ একর জমি। তার মধ্যে কড়াইল বস্তি টিএন্ডটির ৪৩ একর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ২৫ একরসহ মোট ৬৮ একর জমি অবস্থিত।
[১০] গুলশান-বনানী এলাকায় এমআরটি এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিমার্ণের ফলে বুয়েট সমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত ট্রাফিক সিস্টেমও পরিবতিত হয়েছে। এ কারণে সমীক্ষা অনুযায়ী সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন করা বাস্তবসম্মত হবে না। এর প্রেক্ষিতে লেক উন্নয়ন ও পার্শ্ববর্তী সড়ক ও ফুটপাথ উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ অংশটুকু সংস্থান রেখে টিএন্ডটির জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন অবশিষ্ট জমি বাদ দিয়ে সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।
[১১] সভায় ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ ব্যয় অঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ৬৬.০৬ একর হ্রাস পেলেও ব্যয় ১৩২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বৃদ্ধিও কারণ জানতে চাওয়া হয়। এতে রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডিপিপি প্রণয়নের সময় ভূমি অধিগ্রহণে যে ব্যয় ধরা হয়েছিলো তা অনুমানভিত্তিক। যা বাস্তয়নে পর্যাপ্ত চায়।
[১২] সেইসাথে সভায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সময় সাপেক্ষে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধিও প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রণের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজউক কর্তৃপক্ষ জানায়, ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ৭৪.৬০ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। বর্তমানে প্রস্তাবিত মোট ১৪.০৪ একর জমির মধ্যে বাড্ডা ভাটারা মৌজায় ১০.৭৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।