আগামী বাজেটের আকার ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা
সোহেল রহমান : [১] চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও আগামী নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। প্রাথমিকভাবে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের এ আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং সশোধিত বাজেট থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। [২] অন্যদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে ৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে সংশোধিত বাজেটের আকার কমছে ৫১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। মূল বাজেটের তুলনায় শতকরা হিসাবে বাজেটের আকার কমছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
[৩] বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত’ বৈঠকে প্রাথমিকভাবে এসব হিসাব চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উভয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এ দুই বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব ও বাণিজ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
[৪] বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট কাটছাঁটের পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।
[৫] বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিপরীতে টানা ৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারতি লক্ষ্যমাত্রায় ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও অর্থবছর শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।
[৬] এদিকে বরাবরের মত সংশোধিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)-এর আকার কাটছাঁট করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এডিপি’র আকার ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এটি কমিয়ে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে বৈঠকে।
[৭] সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে অনুদান ব্যতীত সার্বিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং জিডিপি’র ৫ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
[৮] এদিকে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন তথা রাজস্ব আদায়। বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।
[৯] জানা যায়, বৈঠকে আমদানি, রফতানি, মুদ্রা বিনিময় হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমানে এসব খাতের সূচকগুলো নিম্নমুৃখী হলেও আগামী বছরের প্রথামার্ধ থেকে তা উর্ধ্বমুখী হতে থাকবে বলে বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। তাই এ নিয়ে দুঃচিন্তা করার কিছু নেই।
[১০] রিজার্ভের বিষয়ে বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে রিজার্ভ কিছু কম থাকলেও আগামী বছর থেকে তা বাড়তে শুরু করবে। বৈঠকে আগামী ১২ ডিসেম্বর আইএমএফ বোর্ড সভায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দেয়া হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।