এ বছর রেকর্ড ৫২.৫ শতাংশ ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ : গবেষণা
মো. আখতারুজ্জামান : [১] চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে এই বছর রেকর্ড ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ইলিশ গবেষকরা বলছেন, জাটকা মৌসুমে সঠিকভাবে সুরক্ষা দিতে পারলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন পৌনে ছয় লাখ টনে পৌঁছাবে।
[২] অভয়াশ্রম পরবর্তী গবেষণায় এমনই চিত্র ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুর রহমান।
[৩] তিনি বলেন, অভয়াশ্রমে এ বছর রেকর্ড ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। গত বছর যা ছিল ৫২ শতাংশ। কিছু অসাধু জেলের ইলিশ নিধন সত্ত্বেও প্রচুর পরিমাণে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে।
[৪] আনিসুর রহমান বলেন, সারা বছরই কম বেশি ডিম ছাড়ায় কিছু ইলিশের পেটে এখনো ডিম পাওয়া যাচ্ছে। নদীতে ছাড়া মা ইলিশের এই ডিমের ১০ ভাগ টিকানো গেলেও আগামী মৌসুমে নতুন করে অন্তত ৪০ হাজার কোটি জাটকা জন্ম নিবে।এই ইলিশ গবেষক আরও বলেন, জাটকা মৌসুমে সঠিকভাবে সুরক্ষা দিতে পারলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন পৌনে ছয় লাখ টনে পৌঁছাবে।
[৫] চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। প্রজননের এই প্রধান সময়টাতে পরিভ্রমণ স্বভাবের মাছ ইলিশ সাগর ছেড়ে মোহনা ও নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসে।
[৬] অভিযানের সঠিক সময় নির্ধারণ আর অনুকূল পরিবেশ পেয়ে এবার ডিম ছাড়ায় সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইলিশের ডিমের পরিপক্কতা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এবং পূর্বের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। [৭] ইলিশ গবেষকদের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৪৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৪৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪৮ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ৫১ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২১ সালে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২২ সালে ৫২ শতাংশ ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে।
[৮] এদিকে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার পর এখন আগামী মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযানের উপর জোর দিয়েছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এই ইলিশের ডিম ও জাটকা রক্ষা করা গেলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে।
[৯] চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার জেলে আবুল কাশেম ও হাবু ছৈয়াল বলেন, এবার চাঁদপুরের নদীতে অধিকাংশ ইলিশই ডিম ছেড়েছে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা রক্ষা অভিযান কঠোরভাবে পালন করা গেলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
[১০] মৎস্য ব্যবসায়ী মো. সোহেল ও জাহাঙ্গীর বলেন, আগামী মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলবে। এই সময়টিতে নদীতে ইলিশের ডিম সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষা করা গেলে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
[১১] মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৮৮ লক্ষ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৯৫ লাখ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৯৭ লাখ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৭ লাখ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩৩ লক্ষ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ লাখ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ টন এবং গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ৫ দশমিক ৬৬ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।
[১২] চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, অভয়াশ্রমের সময়টাতে চাঁদপুরের ৪৩ হাজার ৭৭২ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা প্রদান করা হয়।
[১৩] এছাড়া নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে মোট ৫৪৬টি অভিযানে ৮৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৭৪ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ সময় ২৪ লাখ ৮৯৫ মিটার কারেন্ট জাল এবং ২ দশমিক ২৯৮ টন ইলিশ জব্দ করা হয়। জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৮৩২ টাকা।
[১৪] এই মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ইলিশ অভয়াশ্রম কর্মসূচির আওতায় ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষাকল্পে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা রক্ষা অভিযান চলবে। এই লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে