সিলেটে তেলের খনির সন্ধান প্রতিদিন উত্তোলন হতে পারে ৫০০-৬০০ ব্যারেল
মো. আখতারুজ্জামান : [১] সিলেটের জয়ন্তপুর ও মৈনাটঘাটে প্রথম স্তরে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রথম দিনে পাওয়া গেছে ৭০ ব্যারেল অপরিশোধিত খনিজ তেল। প্রায় ৮-১০ বছর সাসটেইন করবে এবং গড় ভারিত মূল্য হিসেবে এর মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান তিনি।
[২] তিনি বলেন, ৪ থেকে ৫ মাস পর পুরো তেলের মজুত জানা যাবে। এখানে মজুত স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।নসরুল হামিদ জানান, সিলেট-১০ নম্বর কূপে ২৫৭৬ মিটার গভীরতায় খনন সম্পন্ন করা হয়। এই কূপে ৪টি স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। নীচের স্তরটি ২৫৪০-২৫৫০ মিটার টেস্ট করে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রবাহ পাওয়া যায় এবং ফ্লোয়িং প্রেসার ৩২৫০ পিএসআই। মজুতের পরিমাণ ৪৩-১০০ বিলিয়ন ঘনফুট। ২৪৬০-২৪৭৫ মিটারে আরও একটি ভালো গ্যাস স্তর পাওয়া যায়, এখানে টেস্ট করলে ২৫-৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। ২২৯০-২৩১০ মিটারে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ১৩৯৭-১৪৪৫ মিটার গভীরতায় আরও একটি জোন পাওয়া যায় যেখানে ৮-১২-২৩ তারিখে টেস্ট করে তেলের উপস্থিতি জানা যায়, যার প্রাথমিকভাবে এপিআই গ্রাভিটি ২৯.৭ ডিগ্রি।
[৩] সেলফ প্রেসারে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল তেলের প্রবাহ পাওয়া যায়। পরীক্ষা সম্পন্ন হলে তেলের মজুত জানা যাবে। ২৫৪০ এবং ২৪৬০ মিটার গভীরতায় একযোগে উৎপাদন করা হলে প্রায় ৮-১০ বছর সাসটেইন করবে এবং গড় ভারিত মূল্য হিসেবে এর মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যদি ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে উৎপাদন করা হয় তাহলে ১৫ বছরের অধিক সাসটেইন করবে।
[৪] খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি বাড়িকে বিদ্যুতের আওতায় আনা নিশ্চিত করা সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। আর আজকের দেশব্যাপী সুষম উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করেছে সরকারেব এই অর্জন। গত ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আন্তরিক ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতেই প্রতিটি বাড়ি এখন বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।
[৫] নসরুল হামিদ বলেন, দেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। এই মুহূর্তে বিদ্যুতের উৎপাদন ২০০৯ সালের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, যা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ। দেশ লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেয়েছে। তিনি বলেন, দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন প্রয়োজন টেকসই ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা।
[৬] মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, যা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ। সরকার ১৫২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে, যা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ২৭টি। এখন ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সংযোগ বেড়ে ১.০৮ কোটি থেকে দাড়িয়েছে ৪.৫৪ কোটিতে। এছাড়াও, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্প্রতি চালু হয়েছে, দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে মাতারবাড়ী ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুততার সঙ্গে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, কারণ সরকার তার আগের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করেছে এবং উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে।
[৭] পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় জনগণ এখন খুব কমই বিঘ্নের সম্মুখীন হচ্ছে এবং এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
[৮] মিরপুর এলাকার একজন বিদ্যুৎ গ্রাহক আব্দুল কুদ্দুস জানান, ২০০৯ সালের আগে তিনি প্রচন্ড লোডশেডিং হতে দেখেছেন, তবে এখন তিনি চব্বিশ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতাকালে বলেন, দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে বহুপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারণ বিদ্যুতের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকেও ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। বর্তমানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০২ কিলোওয়াট, বিদ্যুৎ সংযোগ ৪ কোটি ৫৪ লাখ ভোক্তা, ৬ লাখ ৪৩ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন এবং ১৪ হাজার ৯৩৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনে পৌঁছেছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান (পিএসএমপি) ২০১৬ অনুযায়ী, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়।
[৯] নসরুল হামিদ বলেন, সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে মাতারবাড়ী কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১২০০ মেগাওয়াট এবং পর্যায়ক্রমে আরও ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের তুলনায় সৌরবিদ্যুৎ অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক। কিন্তু সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের জন্য আরও জমি প্রয়োজন, তাই আমরা উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজছি। আমরা ছাদের সৌর এবং ভাসমান সৌর প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নসরুল বলেন, আমরা ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অংশ ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। তাই বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হচ্ছে। সরকারের আন্তরিক ও নিরলস প্রচেষ্টায় মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘন্টায় ৬০২ কিলোওয়াটে পৌঁছেছে, যা ২০০৯ সালে মাত্র ঘন্টায় ২২০ কিলোওয়াট ছিল, সিস্টেম লস ১৪.৩৩ শতাংশ থেকে মাত্র ৭.৬৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দিনগুলোর কথা আমরা ভুলতে পারি না, কিন্তু সেই দিনগুলো আর নেই। আজ প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে এবং মানুষ বিদ্যুৎ থেকে সর্বাধিক সুবিধা পাচ্ছে। বিদ্যুতের এই উন্নত সেবা মানুষের জীবনকে বদলে দিচ্ছে এবং এর ফলে অর্থনীতির চাকা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে জনগণের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছে। সরকার ইতোমধ্যে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে।