সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে রাজশাহীতে স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পাচ্ছে নিরাপদ পানি
এস.ইসলাম জয় : [১] বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে খরা-প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলসহ এই অঞ্চলে স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) গত প্রায় ১৫ বছরে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে। খবর বাসস
[২] ডিপিএইচই-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাদশা মিয়া বলেন, তারা ‘রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভূগর্ভস্থ নিম্ন পানি-স্তর এলাকায় কমিউনিটি-ভিত্তিক পানি সরবরাহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন- যার ফলে প্রায় ১.৭৩ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে।
[৩] প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রায় ৩২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছরের এ প্রকল্পটি তিনটি জেলার ১২টি উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকৌশলী বাদশা মিয়া বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে প্রায় ৯৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভাগের বিভিন্ন জেলা সদর ও উপজেলায় আরও ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে ১০,৫৫০টি অগভীর তারা পাম্প, ২,৪৮৫টি পরিবর্তিত তারা পাম্প, ২,০৭৩টি অগভীর নলকূপ, ৫৪১টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইউনিট, ১৮৪টি রিং-ওয়েল ও ৩৩টি পাবলিক টয়লেট স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
[৪] পল্লী পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে ১,৩৯৫টি অগভীর তারা পাম্প, ২৭৭টি অগভীর নলকূপ, ১১০টি সাবমারসিবল পাম্পসহ নলকূপ ও আরো অন্যান্য পানি সরবরাহের অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছিল।এছাড়াও জাতীয় স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৮০৮টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও সাতটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।প্রয়োজন ভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ছয়টি পুকুরের পুনঃখনন ও সংস্কারের পাশাপাশি ৪৫৬টি ওয়াশ-ব্লক ও ৬৯টি পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে।
[৫] সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন, দুটি জলাধার, আটটি নলকূপ ও চারটি উৎপাদন পাম্প স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা সদর ও গ্রোথ সেন্টারে অবস্থিত পৌরসভাগুলোতে পানি সরবরাহ ও পরিবেশগত স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ১৫.১৫ কিলোমিটার পাইপলাইন ও চারটি পাম্প হাউস স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়।
[৬] প্রকৌশলী মিয়া বলেন, তারা বিভিন্ন জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার পাইপলাইন ও একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র নির্মাণ ও স্থাপন করেছেন। যেসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কম, সেখানে কমিউনিটি লেভেলের ৪৫২টি সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। সাবমারসিবল পাম্প এখানকার খরা-প্রবণ বরেন্দ্র এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এগুলো জাতিগত সংখ্যালঘুসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানীয় পানি সরবরাহ করছে। [৭] বর্তমান সরকারের প্রথম পাঁচ বছরের মেয়াদে প্রায় ১৬৩.৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি বড় প্রকল্প- ‘বিশেষ গ্রামীণ পানি সরবরাহ’ এবং ‘জিওবি ইউনিসেফ’- সম্পন্ন হয়েছিল। ১৮.৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,৪০২টি অগভীর নলকূপ, ৬.১৯২টি অগভীর তারা টিউবওয়েল, ৩,৯০১টি রূপান্তরিত তারা পাম্প, ১,১০২টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট, ১৩১টি রিং-ওয়েল এবং ১৬টি পাবলিক টয়লেট স্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পল্লী এলাকায় ১.৩৮ কোটি টাকার পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে, ৫১৮টি রূপান্তরিত তারা পাম্প, ১৪৮টি অগভীর তারা পাম্প ও একটি সৌর শক্তি চালিত পাম্প চালু করা হয়েছিল।
[৮] এছাড়াও ০.৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় স্যানিটেশন প্রকল্পের ছয়টি কমিউনিটি টয়লেট ও ৯০০ সেট স্বল্পমূল্যের স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে ৫০৪টি সাবমারসিবল পাম্প, অগভীর নলকূপসহ ৫৫১টি সাবমারসিবল পাম্প, ৩৯২টি ওয়াশ ব্লক ও ১০৭টি শ্যালো পাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
[৯] পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় ৫০টি অগভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন, চারটি প্রোডাকশন পাম্প, তিনটি পাম্প হাউস ও একটি পানি পরিশোধন প্ল্যান্টও জলের নীচে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য ৯০০ টিরও বেশি পরিবার পানি পাচ্ছে।
[১০] সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় ১০ কোটি টাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন, দুটি জলাধার, আটটি নলকূপ, চারটি প্রোডাকশন পাম্প, চারটি পাম্প হাউস ও চারটি বিদ্যুৎ সংযোগসহ ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে।