তিন দফায় আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুন
সোহেল রহমান : [১] বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় তৃতীয় দফা বাড়ছে। তৃতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় ৩২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এটি প্রকল্পের মূল প্রস্তাবিত ব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি। গত ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে গৃহীত প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ৩ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খাদ্য অধিদপ্তর।
[২] এদিকে প্রকল্প ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি দুই দফায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে সাড়ে চার বছর। মূল প্রস্তাবে প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
[৩] খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়াসহ ৭টি কারণে প্রকল্প ব্যয় তৃতীয় দফা বেড়েছে। অন্যান্যের মধ্যেÑ তীর রক্ষা ও জেটির লে-আউট পরিবর্তন; ডিজাইন পরিবর্তন; কনভেয়ার বেল্ট স্থাপন; রেল লাইন স্থাপন; বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণ ও কন্টিনজেন্সি ইত্যাদি কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। [৪] সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল প্রস্তাবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা খাদ্য অধিদপ্তরের অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে এটি কমিয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রকল্পের মূল প্রস্তাবে সরকারি অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংশোধনীতে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৬৫ কোটি টাকা ও ১৬৫ কোটি ৮৯ লাখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল অর্থায়নকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের প্রাথমিক পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে এটি বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩ হাজার ৪৯৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং ৩ হাজার ৭২২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তৃতীয় দফায় ৩২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়তি ব্যয়ের মধ্যে ২২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকাই দেবে বিশ্বব্যাংক।
[৫] সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকার আওতায় রয়েছেÑ দেশের ৫টি বিভাগের ৭টি জেলা যথাÑ নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া (৫টি চালের সাইলো) এবং খুলনা ও চট্রগ্রাম (২টি গমের সাইলো)। খাদ্য উৎপাদন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারের খাদ্যশস্য মজুদ সক্ষমতা বাড়ানো; দুর্যোগের সময় পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্যশস্য ও বীজ সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন; নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য মজুদের মাধ্যমে দুর্যোগকালে জরুরি ত্রাণ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য মজুদ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং পদ্ধতির উন্নয়ন ইত্যাদি এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা ৩৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে বিদ্যমান ধারণক্ষমতা ২২ লাখ মেট্রিক টন থেকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, প্রকল্পটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এর লক্ষ্যমাত্রা-২ এ বর্ণিত ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জনে সুস্পষ্টভাবে অবদান রাখবে।
[৬] সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দেশের ৭টি ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৭টি (চাল ৫টি ও গম ২টি) আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ; উপকূলীয় ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকার ১৯টি জেলার ৬৩টি উপজেলায় ৫ লাখ হাউজ হোল্ড সাইলো বিতরণ; ফুড পলিসি গবেষণা; অনলাইন ফুড স্টক ও মার্কেট মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন এবং ৬টি বিভাগীয় শহরে ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৮৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
[৭] প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ৭টি ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় ৪.৮৮ লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ ৭টি আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণের মাধ্যমে সরকারি পর্যায়ে খাদ্য মজুদ সক্ষমতা বাড়বে। নিরাপদ খাদ্য মজুদের মাধ্যমে দুর্যোগকালে জরুরি ত্রাণ প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে এবং ফুড পলিসি গবেষণা ও অনলাইন ফুড স্টক ও মার্কেট মনিটরিং সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্য মজুদ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং পদ্ধতির উন্নয়ন হবে।