বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়তে পারে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত
সোহেল রহমান : [১] দেশের বেসরকারি খাতে গৃহীত বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়তে পারে। বর্তমানে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সুদের ওপর ঘোষিত কর অব্যাহতির মেয়াদ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় কর অব্যাহতির মেয়াদ আরও ১০ মাস বাড়িয়ে তা ২০২৪ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে শিগগিরই পরিপত্র জারি করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
[২] জানা যায়, এর আগে গত ২৮ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের ওপর ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ শতাংশ কর অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছিল এনবিআর।
[৩] প্রসঙ্গত: ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদেও বৈদেশিক ঋণ নেয়া কমাতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে গত জুলাই থেকে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ২০ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে।
[৪] এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী সুদহার বৃদ্ধির সাথে সাথে, সুদের প্রদানের ওপর বর্তমান বাজেটে আরোপিত ২০ শতাংশ ‘উইথহোল্ডিং ট্যাক্স’-এর কারণে বিদেশি ঋণ এখন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এ ধরনের ঋণের খরচ এখন প্রায় ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ডলার সংকটের মধ্যে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে হিমশিম খেতে থাকা ব্যবসাগুলোকে সহায়তা দিতে কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর কথা চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
[৫] সূত্রমতে, বর্তমানে যে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হচ্ছে, এটি বলা যায় সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি ঋণ গ্রহীতাদের জন্য সরাসরি ভর্তুকি। এ সুবিধা দেয়া হলে আগামী এক বছর বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তরা বৈদেশিক মুদ্রায় নির্দ্বিধায় ঋণ নিতে পারবেন।
[৬] বেসরকারি খাতের ব্যাংকারদের মতে, এর আগে যে সুবিধা দেয়া হয়েছিল, সেটা মাত্র তিন মাসের জন্য, এতে ব্যবসায়ীদের খুব একটা লাভ হতো না। কেননা, কেবল ওই সময়ের মধ্যে যাদের ঋণ পরিশোদের মেয়াদ হতো, তারাই হয়তো একটু সুবিধা পেতেন। এখন যদি এক বছরের জন্য কর অব্যাহতির সুযোগ দেয়া হয়, এতে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে কিছুটা সুবিধা হবে। এর ফলে আর্থিক হিসাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
[৭] জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার এখন আগের লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট (এলআইবিওআর)-এর পরিবর্তে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত হার সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) অনুসরণ করছে। সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন ০.২৫ শতাংশ থেকে ৫.৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২২ সালের শুরুর দিকেও এই হার ১ শতাংশের নিচে ছিল। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণের সুদহার অনুরূপভাবে বেড়েছে। বিদেশি ঋণ ক্ষেত্রে ৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সুদ যোগ হয়েছে।
[৮] এদিকে বিদেশি ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমেছে। ফলে স্বল্প মেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কমতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৩ কোটি ডলার। জুন শেষে যা ছিল ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ডলার।