পিডিবি’র কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা ২০৭ কোটি ডলার
সোহেল রহমান : [১] আর্থিক সঙ্কটের কারণে বেসরকারি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে পারছে না ‘বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড’ (বিপিডিবি)। বর্তমানে বেসরকারি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছে পিডিবি’র দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। বকেয়ার পরিমাণ প্রতি মাসেই বাড়ছে। এদিকে বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো একদিকে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না এবং অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি সংগ্রহ করা তাদের জন্য বিশেষভাবে কঠিন হয়ে পড়েছে।
[২] সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ)-এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক-এ এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির একটি অনুলিপি বিদ্যুৎ বিভাগেও পাঠানো হয়েছে।
[৩] চিঠিতে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকট বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলেছে। কার্যকরী মূলধনের ঘাটতি এবং ডলারের সংকট এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) থেকে অর্থ পরিশোধে দীর্ঘ বিলম্ব বিআইপিপিএ সদস্যদের জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। ‘বাংলাদেশ প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি’ অনুযায়ী ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল’ (এসপিভি) হিসেবে গঠিত আইপিপি কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে। এর ফলে ক্যাশ ফ্লো’র চ্যালেঞ্জ, ঋণের শ্রেণিবিন্যাস ও এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করা বিশেষভাবে কঠিন হয়ে পড়েছে।
[৪] এমতাবস্থায়, চলমান ডলার সংকট, ভর্তুকির অর্থ যথাসময়ে না পাওয়া, এসব কাটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঋণ সুবিধা সহজ করার আবেদন জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে খেলাপি নীতিমালায় গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাইরে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি করা হলে বেসরকারি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সহজে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে এবং এতে করে নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা যাবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
[৫] জানা যায়, বিদ্যমান ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী, কোন খেলাপি গ্রাহক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সুবিধা পাবেন না। তবে খেলাপি গ্রাহকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন গ্রুপ কিংবা প্রতিষ্ঠান ঋণ সুবিধা পাবে। সেক্ষেত্রে শর্ত হলো- উক্ত খেলাপি গ্রাহক ইচ্ছাকৃত খেলাপি যেন না হন। গত ২৬ জুন প্রকাশিত নতুন গেজেটে খেলাপি গ্রাহকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণের এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান যেন ইচ্ছাকৃত খেলাপি না হয় এমন ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে হবে। কোন গ্রাহক যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি নাÑ এমন যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনওসি দেবে।
[৬] সংগঠনের একটি সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেন ঋণ পরিশোধ করতে ও নতুন ঋণ নিতে পারছে নাÑ এ বিষয়ে সরকার অবগত রয়েছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুতের মূল্য বাবদ রাষ্ট্রের কাছে অনেক টাকা পায়। এই টাকা বকেয়া থাকার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এছাড়া পিডিবি পাওনা পরিশোধের সময় ডলারের বিনিময় হার ধরছে ১১১ টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানির জন্য এলসি খুলতে গেলে ব্যাংকগুলো ডলারের দর চাইছে ১২০ টাকার বেশি।
[৭] জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দেয়া চিঠিতে খেলাপি ঋণের ওপর আরোপিত দণ্ড সুদ মওকুফের আবেদনও জানিয়েছে বিআইপিপিএ।
[৮] প্রসঙ্গত: ব্যাংকগুলো এখন ওভারডিউ ও ক্লাসিফায়েড ঋণের জন্য সর্বোচ্চ ১.৫ শতাংশ হারে সুদ নেয় পেনাল্টি হিসেবে। ভাল ঋণগ্রহীতাদের উৎসাহিত করতে এবং খারাপ বা ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নিরুৎসাহিত করতে খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ সুদ আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
[৯] দণ্ড সুদ মওকুফের আবেদন জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের কাছ বিদ্যুতের দাম যথাসময়ে না পাওয়া, ডলারের সংকট ও আমদানি দায় বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে রয়েছে।