১৮ লাখ টন এলপিজি ১৩ শতাংশই ব্যবহারের করছে শিল্প প্রতিষ্ঠান
এস.ইসলাম জয় : [১] বাংলাদেশের বার্ষিক ১৮ লাখ টন এলপিজি ব্যবহারের ১৩ শতাংশই করছে শিল্প প্রতিষ্ঠান। মাত্র পাঁচ বছর আগের ২ শতাংশের তুলনায় যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলওবি) এর তথ্য এসব জানা যায়। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিকল্প জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বাড়াচ্ছে কারখানা সচল রাখতে।
[২] এই পরিবর্তনের জন্য শিল্প সংশ্লিষ্টরা এলপিজির ব্যয়-সাশ্রয়ী দিকটি ভূমিকা রাখছে বলে জানান। এতে ডিজেলের চেয়ে ৬২ শতাংশ কম খরচ হয়। অবশ্য শিল্প কারখানার বয়লার চালাতে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভজনক হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, কিন্তু এর সরবরাহ কমায় কারখানা মালিকরা বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাসের দিকে ঝুকছেন। [৩] টিবিএস’র এক রিপোর্ট বলছে, গত দুই বছরে শিল্প প্রতিষ্ঠানে এলপি গ্যাস বিক্রিতে ২০০ শতাংশের মতোন ব্যাপক উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়ায় পোশাক কারখানা, সিরামিক শিল্প ও স্টিল মিলগুলোয় এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। চলতি বছরে ওমেরার মোট বিক্রির মধ্যে অর্ধেকই করা হয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য। কয়েক বছর আগেও এ ধরনের প্রবৃদ্ধি অকল্পনীয় ছিল। বর্তমানে ৫০টি শিল্প ইউনিট ওমেরার এলপিজি ব্যবহার করছে বলেও জানান তিনি।
[৪] সরকারি কৌশলগত নীতি সহায়তা দিলে শিল্পকাজে এ জ্বালানি ব্যবহার এক বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এলপিজি অপারেটররা। এর আগে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা (সিএনজি) খাতে সরকার এ ধরনের নীতি সমর্থন দিয়েছে, বর্তমানে থ্রি-হুইলার যানবাহনে এই জ্বালানি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। তারা বলেছেন, যন্ত্রপাতি আমদানির কর কমানো হলে এলপিজিকে জ্বালানি হিসেবে গ্রহণ করাটা আরও বাড়বে, ফলে দেশব্যাপী এটি সিএনজির মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
[৫] এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক কোনো নীতি সহায়তা না থাকলেও বাজারের বর্তমান প্রবণতার ভিত্তিতে শিল্প বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে এলপিজি ব্যবহার দ্বিগুণ হবে। [৬] চলতি বছরের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এলপিজি অপারেটরদের পক্ষ থেকে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়। এলপিজি: বাংলাদেশের শিল্পের জন্য বিকল্প জ্বালানি সমাধান শীর্ষক প্রতিবেদনের উপস্থাপনায় তারা বলেছে, ডিজেল বা বিদ্যুতসহ অন্যান্য শিল্প জ্বালানির চেয়ে এলপিজি প্রায় ক্ষেত্রেই অনেক বেশি ব্যয় সাশ্রয় করে।
[৭] এলওবির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, শিল্পের পরিচালন ব্যয় ব্যাপকভাবে কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে এলপিজির। তাই এটি একটি আকর্ষনীয় বিকল্প। সরকার যদি এলপিজি ব্যবহারের একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতি ঠিক করে দেয়, তাহলে শিল্প প্রতিষ্ঠান এই জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহী হবে।
[৮] প্রতিবেদনের উপস্থাপনায় তিনি আরও বলেন, বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে, এলপিজিকে বিকল্প শিল্প জ্বালানিতে পরিণত করতে সরকার একটি নীতি প্রণয়ন করতে পারে। এতে এলপিজি কোম্পানিগুলো আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারবে।
[৯] আজম জে চৌধুরী বলেন, এলপিজি সংযোগ নিতে প্রাথমিকভাবে ব্যয় হয় দেড় কোটি টাকা, সে তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ নিতে লাগে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। সরকার এলপিজি আমদানিতে অনেক কর প্রণোদনা দিলেও এলপিজি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি আমদানিতে উচ্চ কর দিতে হয়। সরকারি নীতির মাধ্যমে এসব বাধা দূর হলে, তা এলপিজি প্রসারে সহায়ক হবে।
[১০] এলপিজি একটি বহুমুখী জ্বালানি হওয়ায় হিটিং, ডায়িং এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন শিল্পকাজে ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন শিল্প প্রক্রিয়ার সাথে অভিযোজনযোগ্যতা থাকায় এটি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শিল্পের জন্য একটি সুবিধাজনক জ্বালানি। অপারেটররা বলছেন, এসব সুবিধাই বাংলাদেশে শিল্প-জ্বালানি হিসেবে এলপিজির প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখছে।
[১১] এলওবি’র মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ব্যবহৃত প্রাথমিক জ্বালানির মধ্যে এলপি গ্যাসের অংশ ছিল ৪ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যা ছিল মাত্র ১ শতাংশ।
[১২] জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-র একটি প্রাক্কলন উদ্ধৃত করে এলওবি জানায়, প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসাবে সমস্ত নতুন এবং বিদ্যমান পারিবারিক গ্রাহক পর্যায়ে এলপিজি চালু করার সরকারি নীতির কারণে ২০৩২ সালের মধ্যে এলপিজির চাহিদা বার্ষিক ৬০ লাখ টন বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে।
[১৩] এলওবির তথ্যমতে, দেশে মোট ২৭টি এলপিজি অপারেটর রয়েছে। এদের মধ্যে নয়টি বর্তমানে দেশের মোট এলপিজি চাহিদার ৮০ শতাংশেরও বেশি পূরণ করে। বাজারের এসব শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ওমেরা, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, নাভানা, বিএম এবং ওরিয়ন এলপিজি খাতে এপর্যন্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
[১৪] দেশের শীর্ষ একটি পোশাক রপ্তানিকারক ফকির ফ্যাশনস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আতিক মুনির বলেন, পোশাক কারখানার বয়লার, স্টেনটার মেশিন, ড্রায়ার এবং সিনজিং মেশিন চালাতে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করা যায়। কারখানায় যখন প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের চাপ কম থাকে বা মূল গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে লোডশেডিং হয় তখন আমরা ব্যাকআপ জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করি- যোগ করেন তিনি।