জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিতে বাংলাদেশ লাভবান হবে : বাণিজ্য সচিব
সোহেল রহমান : [১] বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। [২] বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) সম্পাদনের লক্ষ্যে জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ-এর প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তিনি। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং জাপানের একটি প্রতিনিধি দলও উপস্থিত ছিলেন। [৩] বাণিজ্য সচিব বলেন, প্রথমবারের মতো জাপানের মতো একটি বড়ো দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সই নিয়ে সত্যিকারের কোনো আলোচনা হতে যাচ্ছে। জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতের দেশ এবং বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। উভয় দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি বাণিজ্য সম্ভাবনাময় এলাকা। পণ্য ছাড়াও সেবা ও বিনিয়োগ খাতেও জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোপূর্বে শ্রীলঙ্কা ও ভূটানের মতো ছোটোখাটো অনেক অর্থনীতির সঙ্গে ইপিএ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
[৪] তিনি বলেন, তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ মানেই শেষ নয়। চূড়ান্ত রূপ দেয়ার লক্ষ্যেই দুই দেশ যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার বিষয়ে ঘোষণা দেয় এবং তিন রাউন্ডের সভা শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে, যা প্রকাশ করা হলো। আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি ২০২৬ সালের মধ্যে উভয় দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সই হবে বলে আশা করছি।
[৫] ইপিএ থেকে বাংলাদেশ কী সুবিধা পাবে- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশ এখান থেকে লাভবান হবে। বর্তমানে আমরা জাপানে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছি এবং আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাবো। এটি থেকে প্রথমে যে অর্জনটি আসবে, সেটি হচ্ছেÑ চুক্তি সই হলে ২০২৬ সালের পরও জাপানের বাজারে আমরা এই সুবিধা পাবো, সেটা হারাতে হবে না।
[৬] তিনি বলেন, গত বছর জাপানে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিলো ৪৫ শতাংশÑ যা যেকোনো উন্নত দেশের চেয়ে বেশি। এটা খুবই উল্লেখযোগ্য। অন্য কোনো উন্নত দেশে আমরা এটি অর্জন করতে পারিনি। তারপর জাপান যেহেতু অন্যান্য দেশে প্রচুর এফডিআই করে, আমাদেরও উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্লোবাল ভ্যালু চেইন মার্কেটে নিয়ে যাওয়া। তৈরি পোশাক বলি, জুতা বলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পণ্যটি রপ্তানি করি। এখনকার আইডিয়া হলো মেকিং দ্য ওয়ার্ল্ড। গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে ঢুকতে গেলে বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। আমরা তখন ইন্টারমিডিয়ারি গুডস (মধ্যবর্তী পণ্য) অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারবো। আমরা তো ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছি, জাপানি বিনিয়োগকারীরা সেই সুযোগ ব্যবহার করতে পারেন। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রতি বছর দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়ছে। উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি সই হলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আরো বাড়ার পাশাপাশি দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে।
[৭] প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো আমরা এমন অনেক অবকাঠামোও প্রস্তুত করেছি। সেখানে জাপানি বিনিয়োগকারীদের আলাদাভাবে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে তাদের যদি কোনো সমস্যা হয়, সেটা আলাদাভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। কাজেই জাপানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তি সই নিয়ে আমরা আশাবাদী হতে পারি।
[৮] অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব জানান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তাদের সঙ্গে এ সম্পর্কিত আলোচনায় যাওয়া যায় কি না, আমরা সেই চেষ্টাই করেছি। সম্প্রতি আমরা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের সঙ্গে তিন দফা বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু তা ছিল অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ)। খুবই সীমিত সুযোগ। ধরুন, আমরা কিছু পণ্য বাছাই করি, যেগুলো তাদের শুল্কমুক্ত করে দেবো, তারও এভাবে আমাদের কিছু পণ্য দেবে। এখানে অন্য কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) কেবল বাণিজ্যের মধ্যেই সীমিত থাকবে না, এখানে বিনিয়োগ, সরকারি ক্রয়সহ সেবা খাতেও বিনিয়োগ হবে।
[৯] বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, এ চুক্তি থেকে জাপান-বাংলাদেশ উভয় দেশই লাভবান হবে। তবে দুই পক্ষ কী পরিমাণ লাভবান হবেÑ সেটা আগে বলা কঠিন। তবে এটি কেবল শুল্কের সঙ্গেই সম্পর্কিত না, সেবা খাত, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নতকরণসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যেই চুক্তিটি করতে হবে। যে কারণে বর্তমান পরিস্থিতি একটু ভিন্ন।
[১০] বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রস্তাবিত ইপিএ সম্পাদনের লক্ষ্যে স্কোপ ও কভারেজ হিসেবে উভয় দেশ ১৭টি খাত চিহ্নিত করেছে। সরকারি, বেসরকারি, একাডেমিয়া ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট-এ (িি.িসরহপড়স.মড়া.নফ) পাওয়া যাবে।