জাল মুদ্রা প্রতিরোধ আইন-২০২৩ ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেফতার এবং অ-জামিনযোগ্য অপরাধ
সোহেল রহমান : [১] দেশে প্রচলতি মুদ্রার আদলে জাল মুদ্রা তৈরি করা, ধারণ, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার, মজুত, পরিবহন, সরবরাহ ও এসব কাজে সহায়তা ইত্যাদি কার্যক্রম প্রতিরোধসহ বৈধ মুদ্রা ব্যবহারে আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘জাল মুদ্রা প্রতিরোধ আইন ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। প্রণীত খসড়ায় জাল মুদ্রা সংশ্লিষ্ট অপরাধ সুনির্দিষ্টকরণ এবং অপরাধের শাস্তি কঠোর করা হয়েছে। জাল মুদ্রা সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে এমন সন্দেহজনক স্থানে ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি করা যাবে এবং সন্দেহজনক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাবে। এ আইনে দায়েরকৃত মামলা হবে অ-আপোসযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য।
[২] অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খসড়া অনুযায়ী, জাল মুদ্রা প্রতিরোধে একজন বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সম্পর্কিত একটি তথ্য ভান্ডার স্থাপন ও পরিচালনা করবে এবং একজন নির্বাহী পরিচালক-এর পদমর্যাদার কর্মকর্তার সভাপতিত্বে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘জাল মুদ্রা প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটি’ গঠন করবে। কোন মুদ্রা জাল কি না তা প্রত্যয়ন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সী অফিসার কিংবা তার প্রতিনিধিরা।
[৩] খসড়া অনুযায়ী, জাল মুদ্রা সম্পর্কিত ৮ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ মুদ্রা জালকরণ বা জ্ঞাতসারে মুদ্রা জালকরণ প্রক্রিয়ার যে কোন অংশ সম্পাদন করা; কোন মুদ্রা জাল বলে জানা সত্ত্বেও বা জাল বলে বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও, জাল মুদ্রা মজুত-ক্রয়-বিক্রয়-ব্যবহার-গ্রহণ কিংবা অন্য কোন ভাবে এটাকে আসল মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার বা লেনদেন করা; মুদ্রা জাল করার কাজে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে বা জাল করার কাজে ব্যবহার করা হবে জানা সত্ত্বেও বা তদ্রুপ বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও, কোন যন্ত্র, হাতিয়ার, উপাদান বা সামগ্রী তৈরি করা বা তৈরি প্রক্রিয়ার কোন অংশ সম্পাদন করা, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার, সরবরাহ, আমদানি-রপ্তানি, মেরামত, বহন, হেফাজত বা নিজের দখলে রাখা; জাল মুদ্রা তৈরি সংক্রান্ত পদ্ধতি উদ্ভাবন বা তথ্য আদান-প্রদান করা; জাল মুদ্রা তৈরি সংক্রান্ত কোন ফাইল, অডিও-ভিডিও ক্লিপিং ইত্যাদিও হার্ডকপি কিংবা সফ্ট কপি নিজের কাছে বা দখলে রাখা; জাল মুদ্রা বিদেশ থেকে দেশে কিংবা দেশ থেকে বিদেশে পাচার; ব্লিচড (আসল মুদ্রার মুদ্রণ মুছে ভিন্ন মূল্যমানের অনুরূপ মুদ্রণ) বা টেম্পার্ড (আসল মুদ্রার নম্বর, সই, মূল্যমান বা কোন মুদ্রণ বৈশিষ্ট ঘষা-মাজা করে তৈরিকৃত মুদ্রা) বা মিস-ম্যাচ্ড মুদ্রা (প্রতারণার উদ্দেশ্যে এবকাধিক মুদ্রার অংশ-বিশেষ সংযুক্ত করে তৈরিকৃত মুদ্রা) এবং জ্ঞাতসারে জাল কিংবা আসল মুদ্রা সম্পর্কিত কোন গুজব ছড়ানো।
[৪] খসড়া অনুযায়ী, প্রণীতব্য আইনে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে সময়সীমা আরও ৩০দিন বাড়ানো যাবে। আইনে চিহ্নিত প্রথম ৭ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সম-পরিমাণ বা অনধিক ১ কোটি টাকা আর্থিক জরিমানা এবং অনাদায়ে অতিরিক্ত ৫ বছর কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সর্বশেষ চিহ্নিত গুজব ছড়ানো সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ২ বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।