বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প কাজের গতি বৃদ্ধি, সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে ঋণচুক্তির আগেই দুই প্রকল্পে অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়া
সোহেল রহমান : [১] বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে গতি বাড়াতে পরীক্ষামূলকভাবে অগ্রিম ক্রয় (অ্যাডভান্স প্রকিউরমেন্ট) প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অগ্রিম ক্রয় বলতে সাধারণত ঋণচুক্তি কার্যকরের আগে পণ্য, সেবা ও কাজের জন্য ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেয়াকে বোঝায়। এতে প্রকল্পের ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। এ প্রক্রিয়ায় প্রকল্পে অর্থায়নকারী দাতাসংস্থার সংস্থার সম্মতিও পাওয়া গেছে। অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়ায় দাতাসংস্থার সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি সই হওয়ার আগে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করে কয়েক মাস এমন কী বছর পর্যন্ত সময় বাঁচানো যাবে বলে মনে করছে সরকার।
[২] অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা যায়, সরকারে প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছেÑ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব দূর করা। অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়ায় আগেভাগে ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ করে প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল্যবান সময় বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দুটি প্রকল্পে অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে এবং এতে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রকল্প দুটির একটি হচ্ছেÑ নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)-এর অর্থায়নে ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্প এবং অন্য প্রকল্পটি হচ্ছেÑ এশিয়ান ডেভেলপন্ট ব্যাংক (এডিবি)-এর অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। এ দুই প্রকল্পের আগে এডিবি’র অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পে চূড়ান্ত ঋণচুক্তির আগে পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগের জন্য ‘অগ্রিম ক্রয়’ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছিল।
[৩] জানা যায়, ওয়াসার প্রকল্পটিতে পরামর্শক নিয়োগের সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী মে-জুন নাগাদ এনডিবি’র সঙ্গে ঋণচুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এমতাবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করতে এনডিবি’র সম্মতি নিয়ে ঋণচুক্তি চূড়ান্ত করার আগে অগ্রিম ক্রয় শুরু করেছে ঢাকা ওয়াসা।
[৪] অন্যদিকে সময় বাঁচানো ও কাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে অগ্রিম ক্রয়ের সুবিধার কথা মাথায় রেখে অর্থায়নকারী প্রকল্পগুলোর জন্য ডিফল্ট অপশন হিসেবে অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়া চালু করেছে এডিবি। এ প্রক্রিয়াটি প্রকল্প শুরুর বিলম্ব কমানো এবং প্রকল্পপ্রস্তুতি বাড়ানোর পাশাপাশি খোদ এডিবি’র খরচের ক্ষেত্রও হ্রাস করে। এ বছরই এ পদ্ধতিটির সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
[৫] জানা যায়, বৃহত্তম দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংক এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অগ্রিম ক্রয়ের বিষয়টি শুরু করেনি, এটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন এবং নকশার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পর্যায়গুলোর জন্য একটি প্রস্তুতিমূলক তহবিল ব্যবহার করে। এ পদ্ধতিটির কার্যকারিতায় কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
[৬] সূত্র মতে, বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বছরের পর বছর ধরে অতিরিক্ত সময় এবং ব্যয় সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে। উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে প্রকল্পগুলো প্রায়শ:ই ধীরগতিতে শেষ হয়। ঋণচুক্তির পরে শুরু হওয়া দীর্ঘ ক্রয় প্রক্রিয়া প্রকল্পের অগ্রগতি এবং ঋণের গুরুত্বপূর্ণ গ্রেস পিরিয়ড কমিয়ে দেয়। কোনো কোনো ক্রয় প্রক্রিয়ায় তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে গ্রেস পিরিয়ড তথা ঋণ প্রদানের তারিখ থেকে প্রথম কিস্তি আদায়ের মধ্যবর্তী বিরতিকালের সুবিধা পায় না সরকার। এ প্রেক্ষিতে সরকারি সংস্থাগুলো উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে কাজ করছে। ইআরডি ঋণ আলোচনার সময় যেখানেই সম্ভব অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে।
[৭] জানা যায়, যথাসময়ে এবং সাশ্রয়ীভাবে প্রকল্প সমাপ্তির রূপরেখাসহ ২০১৭ সালে প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য তহবিল এবং ব্যবস্থাপনা নীতি শিরোনামে একটি গেজেট জারি করা হয়েছিল। ওই গেজেটে কোনো প্রকল্পের মূল নির্মাণ-পর্ব শুরু করার আগে ক্রয়সহ সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ চূড়ান্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়। সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা এখনো কার্যকর করা যায়নি।