বন্ধ করুন এই তামাশা, সঠিক তথ্য হাজির করুন
ফরিদা আখতার
রাত প্রায় ১০টার দিকে গতকাল টিভি খুলেছিলাম খবর দেখবো বলে, কিন্তু দেখলাম টিভি স্ক্রীন জুড়ে আগুন জ্বলছে, একটি ট্রেনে। নীচে ব্রেকিং নিউজ আছে গোলাপবাগে ট্রেনে আগুন লেগেছে, ফাইয়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নেভাবার চেষ্টা করছে। আঁতকে উঠেই বসে গেলাম লাইভ খবর দেখতে। একের পর এক রিমোট টিপলাম সব চ্যানেলে দেখাচ্ছে কিনা। লক্ষ্য করলাম এক নাগারে এই লাইভ দেখানোর কাজ সব টিভি চ্যানেলগুলো করছে না, করছে মাত্র কয়েকটি চ্যানেল।
নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের সময়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটবে এমন আশংকা যে ছিল না তা নয়। কিন্তু সেটা মনে করা হয়েছিল কোন একটি কর্মসূচি ঘিরেই হবে, মিছিল, মিটিংয়ের সময় হবে। কিন্তু একটি সাধারণ যাত্রীবাহী ট্রেনে হবে এমন আশংকা অন্তত আমার মনের আনাচে কানাচেও ছিল না। কিন্তু তাই ঘটলো। যারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা বুঝে শুনেই করেছে। তাদের নিষ্ঠুর চিন্তা ও পরিকল্পনাকে ধিক্কার জানাই।
ট্রেনের নাম বেনাপোল এক্সপ্রেস। বেনাপোল থেকে সকালে রওয়ানা হয়ে এসেছে, কমলাপুর রেল স্টেশনে প্রায় পৌঁছেই গিয়েছিল। যাত্রিরা তাদের মাল পত্রও গোছাচ্ছিলেন। বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী জানালেন। চারটি বগিতে আগুন লেগেছে। কেউ বলছেন অনেক যাত্রী ছিল, কেউ বলছেন তার বগিতে অত যাত্রী ছিল না। যাই হোক, কম হোক বা বেশি, যাত্রী বেশকিছু ছিল। তাদের অনেকেই ভারত থেকে ফিরছিলেন।
টিভি লাইভে ট্রেনের আগুনের ঘটনা যখন দেখছিলাম তখন একজন প্রতক্ষ্যদর্শী বর্ণনা করছিলেন আগুন লাগা বগির একজন যাত্রী কিভাবে জানালা দিয়ে হাত বের করে সাহায্য চাইছিলেন। যিনি বলছিলেন বলার সময় তার গলা কাঁপছিল। কারণ সেই মানুষটিকে বাঁচানো যায়নি। তিনি নিজে চেষ্টা করলে হয়তো বের হতে পারতেন, কিন্তু তার স্ত্রী সন্তান ভেতরে ছিল তাই সাহায্য চাইছিলেন। মানবজমিনে তার বর্ণনা যেভাবে দিয়েছে তা এখানে তুলে ধরলাম।
একজন ব্যক্তি জানালা দিয়ে ঝুলে ছিল। আমরা অনেক টানাটানি করেছি কিন্তু তাকে বের করতে পারিনি। পরে জানালায়ই তিনি মারা গেছেন।
ভিডিওতে দেখা যায় ট্রেনে আগুন লাগার সময় জানালা দিয়ে ওই যাত্রী বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। হাত বাড়িয়েছিলেন সাহায্যের জন্য, বের হতে পারেননি। তার অর্ধেক শরীর ট্রেনের জানালার বাইরের, অর্ধেকটা ভেতরে ছিল।
ওই ব্যক্তিকে জানালা থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছেন অনেকে। তাকে উদ্ধার করতে যাওয়া একজন তার শরীরে স্পর্শ করতে গিয়ে আগুনে আহত হন। এরপর অনেকে বাঁশ দিয়ে তাকে বের করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সবার সামনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে তার। (প্রতিবেদন কমেন্ট বক্সে)।
এতো মর্মান্তিক এই ঘটনার পর খুব ভয়াবহ মনে হোল যখন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে যারা উপস্থিত হয়েছিলেন তারা কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই তাৎক্ষণিক মন্তব্য করে ফেলেছেন যে হরতাল আহবানকারীরাই এই আগুন লাগিয়েছে।
আরো আশ্চর্যের বিষয় যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এতো গোয়েন্দা তৎপরতা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারী থাকা সত্ত্বেও তারা আগে ভাগে কোন কিছু জানতে পারে নাই। কিছুদিন আগে ট্রেনে আর ও একটি আগুনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একজন মা তার শিশুসহ নিহত হয়েছিলেন। এই ঘটনায় র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ট্রেনে আগুন লাগার পর জুরাইন বস্তিতে কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তির আনাগোনার তথ্য পায় আমাদের গোয়েন্দারা। এরপর র্যাব-৩ অভিযান চালিয়ে আলমগীর, রাব্বী ও কাশেম নামের তিনজনকে আটক করে। যেখান থেকে তাদের আটক করা হয়েছে যেখান থেকে ট্রেনে সহজে অগ্নিসংযোগ করা সম্ভব। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখানে বসে বিপুল পরিমাণে ককটেল ও পেট্রল বোমা বানাচ্ছিলেন তারা। সেখানে ৩০টি তৈরি ককটেল ও ২৮টি পেট্রল বোমা পাওয়া গেছে। বাহ খুব সুন্দর। তাহলে ট্রেনে আগুন না লাগলে এ খবর জানা যেতো না? এই ককটেল বা পেট্রোল বোমা কোথাও না কোথাও ফুটতো। লেখক : মানবাধিকার ও উন্নয়ন নেত্রী (ফেসবুক থেকে)