ডিসকাউন্ট দিতে পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা হয়
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পণ্য সরবরাহ করে থাকে। এদের প্রায় সবার সঙ্গেই রপ্তানি কিংবা লেনদেনে সাধারণত জটিলতা দেখা দেয় না।
[২] তবে সুযোগসন্ধানী কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নানা বাহানায় চুক্তির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দর কম দেওয়া অর্থাৎ ডিসকাউন্টে নেওয়ার অন্যায্য চর্চা করছে। ডিসকাউন্টের পর বাকি মূল্য পরিশোধেও টালবাহানা করে থাকে। গন্তব্য বন্দর থেকে পোশাক বুঝে নেওয়ার পরও ডিসকাউন্ট দিতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া সরবরাহকারী দেশের যে কোনো দুর্বলতার সুযোগে অন্যায্যভাবে ডিসকাউন্টের সুযোগ নিয়ে থাকে এসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। খবর- সমকাল অনলাইন
[৩] যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, সে অনুযায়ী অর্থ দেশে না আনাসহ অর্থ পাচারের মতো গুরুতর সন্দেহ তৈরি হয়, তার একটি কারণ এই ডিসকাউন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি মূল্যের ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশে প্রত্যাবাসিত হয়নি। এমন বাস্তবতায় ডিসকাউন্টের সুযোগসন্ধানী ক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দেশের প্রধান পণ্য পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। [৪] অন্যায্য ডিসকাউন্টের জন্য চাপ দেওয়া ক্রেতাদের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিজিএমইএকে জানাতে সদস্য কারখানাগুলোকে পরমার্শ দেওয়া হয়েছে। যদি দেখা যায়, কোনো ক্রেতা একাধিক কারখানার সঙ্গে প্রায়ই একই কাজ করেছে, তাহলে ক্রেতা দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। তার আগে নির্দিষ্ট ওই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতামূলক আলোচনায় বসবে বিজিএমইএ। প্রয়োজনে এ ধরনের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আদেশ না নেওয়ার জন্য সব কারখানাকে পরামর্শ দেওয়া হবে।
[৫] বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ক্রেতা এ ধরনের সুযোগ নিয়ে আসছে। এতে নানান সংকট তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় সংকট হয় রপ্তানিকারদের ইমেজের। পেশাক খাতের ভালো ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। তবে গুটিকয়েক ক্রেতার প্রতারণামূলক উদ্দেশ্যের কারণে অর্থ পাচার কিংবা রপ্তানি মূল্য দেশে না আনার অভিযোগ শুনতে হয়। রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসিত না হওয়া মানেই পাচার নয়।
[৬] ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিসকাউন্ট কমিটির সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বিজিএমইএ বৈঠক করবে।
[৭] বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ডিসকাউন্টের কারণে হয়তো বড় অঙ্কের ডলার দেশে না এলে রপ্তানিকারকদের ওপর পাচারের দায় দেওয়া হয়। তবে যে কারখানা মালিকের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ অর্থ দেশে আসে না, তার ব্যক্তিগত ক্ষতি মারাত্মক। ডিসকাউন্টের পর যে অর্থ পরিশোধ করা হয়, তা হাতে আসতেও কয়েক মাস লেগে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কাছ থেকেও তারা সহযোগিতা পান না। এর পরিণতিতে সাবকন্ট্রাক্টের কাজ করা অথবা কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকে না।
[৮] উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উদ্দেশ্যমূলক ডিসকাউন্টের ক্ষেত্রে সাধারণত পণ্য হাতে পাওয়ার পর কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণার জন্য স্থানীয় আদালতের দারস্থ হয়ে থাকে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া উল্লেখিত শর্ত মতো পণ্য বুঝে না পাওয়া, আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারক দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পরও পণ্য বুঝে নিতে অস্বীকার করা এমনকি সরবরাহকারী দেশের যে কোনো ধরনের দুর্বলতার সুযোগে অন্যায্যভাবে পোশাকের মূল্য কম নিতে সরবরাহকারী কারখানা কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে এসব ক্রেতা।
[৯] সাধারণত রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট গ্রহণযোগ্য হিসেবে মেনে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বেশি হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ যুক্তি উপস্থাপন করতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অধীনে ডিসকাউন্ট কমিটির কাছে। উদ্যোক্তাদের এ কাজে সহযোগিতা দেওয়া হয় বিজিএমইর পক্ষ থেকে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ডিসকাউন্ট কমিটিতে জমা দিতে হয়।