দেশের পর্যটন খাতকে বিকশিত করা প্রয়োজন
তাহমিদ তাজওয়ার : বাংলাদেশে ফুল ফুটেছিলো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ও সেই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বে তার স্বতন্ত্র সুগন্ধ ছড়াতে শুরু করে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে একটি নবজাত জাতি বিশ্বকে তার অস্তিত্ব জানিয়েছিলো যার ভিত্তি ছিলো লক্ষাধিক প্রাণের বলিদান, নারীর মর্যাদা ও একটি নির্বিচার, ন্যায়ভিত্তিক জাতি গড়ার স্বপ্ন। যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি জনগণের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভঙ্গুর, বিধ্বংসী ও বিস্ময়কর ছিলো। সেসব ধাক্কা সামলাতে গিয়ে অনেকক্ষণ কেটে গেলো। কিন্তু জাতির অভ্যন্তরীণ শান্তি ছিলো তারা বহিরাগতদের দ্বারা শাসিত হতে বাধ্য নয়, জাতিগত নিপীড়নের মুখোমুখি হবে না ও আধিপত্য অর্জন করবে। তারা ছিলো সেই পাখির মতো যার পর্যাপ্ত খাবার ছিলো না, টেকসই বাসা ছিলো কিন্তু তার নিজের আকাশে উড়তে দুটি ডানা ছিলো। রূপকভাবে পাখির সেই দুটি ডানা হলো স্বাধীনতা যার মাধ্যমে এটি তার খাবারের সামর্থ্যরে জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি বেস উদ্যোগ নিতে সক্ষম হয়, একটি বাসা ডিজাইন করে ও চাহিদা অনুযায়ী এটি চালাতে পারে। এখানে স্বাধীনতার স্বাদ ও খাঁচাবন্দী তোতাপাখির মতো তাদের স্বার্থের জন্য তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টা সিদ্ধির বিজয়।
বিজয়ের চেতনা ছিলো স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা, উদ্যোগ নেওয়া, অধিকার সমুন্নত রাখা ও একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে স্বার্থকে উন্নীত করা। আকাশে উড়ন্ত পাখির মতো জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষম হওয়াই ছিলো মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মহানুভবতা। লাখো ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় পৃথিবীর বুকে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত, সমৃদ্ধ, সুখী-সমৃদ্ধ বাঙালি জাতির প্রত্যাশা করে। ৫২ বছর পেরিয়ে গেছে। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় এখন পর্যন্ত গৌরব ও অর্জন পর্যালোচনা করার সামান্য সময়। একটি জাতি হিসাবে আমাদের সভ্যতার জন্য আমাদের অবদান পরিমাপ করা উচিত। বিজয় বোঝায় অবদান ও বিজয় যেখানে স্বাধীনতা বোঝায় অর্জন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেক্রেটারি অফ স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার একবার স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ সংজ্ঞায়িত করে ব্যঙ্গ করেছিলেন। সেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। পোশাক খাতের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে এর একটি দৃঢ় প্রভাব রয়েছে একটি উদাহরণ হিসেবে যা বিদেশি দেশগুলোর জার্সিতে দেখা যায় যেখানে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ উল্লেখ করা হয়েছে, তা আমাদের দেশের গৌরব ও সক্ষমতাকে নির্দেশ করে। তবে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। এ খাত প্রতিষ্ঠিত হলেও দুষ্টের দৃষ্টিতে অদম্য নয়। ইউরোপীয় দেশগুলো ও তার মিত্ররা তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যেখানে বাংলাদেশের জনগণকে বলির পাঁঠা করা হবে। তাই আমাদের অন্যান্য খাতকে প্রসারিত করতে হবে, যে কোনো অপ্রত্যাশিত ও জঘন্য প্রভাবের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে হবে।
শিক্ষা খাতকে উন্নীত করা উচিত ছিলো যেখানে আধ্যাত্মিক শুদ্ধ শিক্ষা ও বস্তুবাদী প্রযুক্তিগত পাঠ্যক্রম উভয়ই সহাবস্থান করবে। আমাদের শিল্প এলাকাগুলোকে পরিকল্পিত করতে হবে ও আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা বহন করতে হবে যা ব্রেন ড্রেনকে মোকাবেলা করবে ও জাতিকে বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, গুগল, নাসার মতো বৈশ্বিক মাল্টি সেক্টরাল অর্গানাইজেশন এলাকায় রপ্তানি করতে সক্ষম করবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ পাঠাতে বিশ্বকে তাদের শিক্ষাগত শক্তি জানাতে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ভূখণ্ড থেকে বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী ব্যক্তির সংখ্যা ঘাটতি দেখায়। বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব তালিকায় বাংলাদেশি ব্যক্তিত্ব খুঁজে পেতে আমরা মাত্র কয়েকটি নাম পেয়েছি। প্রয়াত জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্র নাথ বসু, ডক্টর জামাল নজরুল ইসলাম, মহাবিজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অনেকদিন হয়ে গেলো, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর মতো কোনো লোক নেই। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাট উৎপাদনের সোনালী ঐতিহ্য ছিলো আমাদের। এখন এটা পুরোনো দিনের সুন্দর মায়া ছাড়া আর কিছুই নয়। একই সময়ে স্বাধীন হওয়া কাতার এখন তেল রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে একটি বিশাল অবস্থান ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের একটি ছোট দেশ। তাই দেশিয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই। পর্যটন খাত আজকাল একটি দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বাংলাদেশ সবুজাভ মুক্তা।
সরকার যদি পদ্ধতিগতভাবে পরিকল্পনা নির্ধারণ করে, তাহলে বিশ্ব পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের আতিথেয়তা ও সহ-অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত। তাছাড়া প্রত্যাশা ও গৌরবময় অতীত সুশাসনের ব্যবধান কমানোর জন্য, বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের প্রভাব বাড়াতে দেশের প্রতি আমাদের নৈতিকতা ও সংকল্পকে উন্নত করতে হবে। গত ১৫-২০ বছর ধরে, আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন শীর্ষে রয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের মনোযোগ নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক খাতে স্থানান্তর করার জন্য একীভূত উদ্যোগ নেওয়ার যেখানে বাংলাদেশ একাধিক সেক্টরে নেতৃত্ব দেবে। বিজয়কে মহিমান্বিত করতে বাংলাদেশ নামের ফুলের সুবাস ছড়াতে হবে। অন্যথায় শহীদদের চেতনা, ত্যাগ ও প্রত্যাশা ও তারা যে বিজয় আমাদের উপহার দিয়েছিলেন, তা প্রতারিত হবে।
লেখক : একজন এমএসএস ছাত্র, সমাজকর্ম বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্র : ডেইলি অবজার্ভার। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ