গত অর্থবছরে পিডিবি’র লোকসান ৫২.৪ শতাংশ বেড়েছে মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : [১] রেকর্ড পরিমাণ ভর্তুকি পাপ্তি ও পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম দুই দফা বাড়ানো হলেও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)-এর লোকসান বেড়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্থাটির মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। এটি এর আগের অর্থবছরের লোকসানের তুলনায় প্রায় ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
[২] জানা যায়, গত অর্থবছরে সরকার পিডিবি-কে ভর্তুকি দিয়েছে ৩৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে দুই দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
[৩] পিডিবি’র মতে, ডলারের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি ও ভারত থেকে অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি করায় লোকসান বেড়েছে।
[৪] কিন্তু বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ওভার ক্যাপাসিটি, আমদানি নির্ভর জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সঙ্গে সরকারের ত্রুটিপূর্ণ চুক্তির কারণে এ খাতে লোকসান বাড়ছে।
[৫] জানা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিপিডিবি’র সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনতে। এ খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৯ হাজার ২২ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
[৬] এরপর সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এ বাবদ খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৩০৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। জ্বালানি খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় এই খরচ আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেড়েছে।
[৭] গত অর্থবছরে ৫২ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গ্যাস থেকে। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম সরকার গত জানুয়ারিতে ১৭৮ শতাংশ বাড়িয়েছিল, এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচে।
[৮] গত অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিপিডিবি বিদ্যুৎ কিনেছে ১০ হাজার ৭৮৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
[৯] এছাড়া গত অর্থবছরে ভারত থেকে প্রায় ১০ হাজার ৫১৫ গিগাওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ এসেছে। এর মধ্যে আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে এসেছে ১ হাজার ৫৯৮ গিগাওয়াট/ঘণ্টা, যেটি গত ৪ এপ্রিল থেকে চালু হয়। তার আগের অর্থবছরে ভারত থেকে মোট ৭ হাজার ৬৪৪ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ এসেছে।
[১০] পিডিবি’র ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ২২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা এক বছর আগের তুলনায় ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
[১১] কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সংস্থাটি কিনেছে প্রায় ২ হাজার ৯৮৭ গিগাওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ, এর দাম পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
[১২] সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে ৮৮ হাজার ৪৫০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবি’র ব্যয় হয়েছে ৯৬ হাজার ৮৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অন্যদিকে ছয়টি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে এ বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে ৫০ হাজার ৮৫৮ কোটি ২৫ লাখ টাকায়।
[১৩] গত অর্থবছরে পিডিবির গড়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুৎ কিনেছে ১১ টাকা ৩৩ পয়সায়, যা এক বছরের আগের তুলনায় ২৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। বছরের মধ্যে দুবার দাম বাড়ানোর পরেও ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কিলোওয়াট/বিদ্যুৎ ৬ টাকা ৭০ পয়সা দরে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করেছে সংস্থাটি।