বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩-এর খসড়া অনুমতি ছাড়া বিদেশী মুদ্রা ও বিদেশে সিকিউরিটিজ হস্তান্তর করা যাবে না
সোহেল রহমান : [১] বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বিনিময় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য অনুমোদিত ডিলার এবং মানি চেঞ্জার-এর অনুমোদন প্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বিনিময় সংশ্লিষ্ট ব্যবসা করতে পারবে না। বাংলাদেশের সকল ব্যক্তি; বাংলাদেশে নিবাসী সকল ব্যক্তি; বাংলাদেশের বাইরে বাংলাদেশে নিবাসী যে কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন বা তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান বা এর শাখা, অফিস ও এজেন্সি; বাংলাদেশে অবস্থিত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সকল অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও সরকার ঘোষিত কোনো বিশেষ অঞ্চলের ক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য হবে।
[২] ‘বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’-এর খসড়ায় এসব বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খসড়াটি প্রণয়ন করেছে।
[৩] আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশের বাইরে পরিশোধ, বৈদেশিক মুদ্রায় চলতি ও মূলধনী হিসাবের লেনদেন, বৈদেশিক বিনিময় ও সিকিউরিটিজের লেনদেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা, পণ্য, সেবা ও স্বর্ণ-রৌপ্যের আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
[৩] খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ বা বিশেষ পূর্বানুমতি ব্যতীত অনুমোদিত ডিলার ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং বাংলাদেশে নিবাসী কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমার বাহিরের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় বা ঋণ গ্রহণ করতে বা বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রয় বা ঋণ প্রদান অথবা অনুমোদিত ডিলার নয়Ñ এরূপ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিময় করতে পারবে না।
[৪] অনুমোদিত ডিলার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বৈদেশিক বিনিময়ের কোনো লেনদেন করিবার পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় ঘোষণা ও তথ্য সংগ্রহ করবেÑ যাতে সে নিশ্চিত হইতে পারে যে, লেনদেনটি এই আইনের শর্ত লঙ্ঘন করে নাই। ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি আইনের বিধান মানতে অস্বীকার করে তবে অনুমোদিত ডিলার লেনদেনে অস্বীকৃতি জানাবে এবং যদি উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা ও তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি আইন লঙ্ঘন করেছেন সেক্ষেত্রে বিষয়টি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক-কে অবহিত করতে হবে।
[৫] অনুমোদিত ডিলার ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তিকে শর্তাধীনে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করার অনুমতি দেয়া হলে ওই ব্যক্তি সেই উদ্দেশ্য ভিন্ন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে পারবেন না। আর ব্যয় করা সম্ভব না হলে নির্দেশিত সময়ের মধ্যে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা একজন অনুমোদিত ডিলারের কাছে বিক্রয় করতে হবে।
[৬] বাংলাদেশে নিবাসী কোনো ব্যক্তি কোনো অনুমোদিত ডিলারের কাছে বা তার কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় বিক্রয় বা ক্রয় করিতে পারিবেন, যদি উক্ত বিক্রয় বা ক্রয় চলতি প্রকৃতির লেনদেন হয়। তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক জাতীয় স্বার্থে চলতি ও মূলধনী হিসাবে ভারসাম্য বজায় রাখিবার লক্ষ্যে চলতি প্রকৃতির লেনদেনের উপর যুক্তি সঙ্গত বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারবে।
[৭] বাংলাদেশ ব্যাংক যদি কোনো ব্যক্তিকে শর্তাধীন বা শর্ত ব্যতিরেকে সাধারণ বা বিশেষ অব্যাহতি প্রদান না করে, তাহলে বাংলাদেশে নিবাসী কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাইরে নিবাসী কোনো ব্যক্তি বা তাহার অনুকূলে কোনো অর্থ পরিশোধ বা প্রেরণ করতে পারবে না। যদি বাংলাদেশের বাহিরে কোনো ব্যক্তি পরিশোধ গ্রহণ করিয়াছেন বা কোনো সম্পত্তির মালিক হইয়াছেন এইরূপ বিষয়ের সহিত যদি উক্ত পরিশোধ বা অর্থ প্রেরণের কোনো সম্পর্ক থাকে।
[৮] খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ বা বিশেষ অনুমোদন ব্যতীত এবং প্রযোজ্য ফি পরিশোধ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো স্বর্ণ, অলংকার বা দামি পাথর বা বাংলাদেশি কারেন্সি নোট, ব্যাংক নোট বা ধাতব মুদ্রা বা বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আনয়ন অথবা বাংলাদেশ থেকে অন্য কোনো দেশে প্রেরণ করতে পারবে না। তবে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখার বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে, কোনো জাহাজ বা বহনকারী যানবাহন থেকে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমার মধ্যে অবতরণ বা খালাস না করা হলে, উল্লেখিত দ্রব্যাদি বাংলাদেশের কোন অঞ্চল বা স্থানে আনয়ন করা হয়েছে বলে গণ্য হবে না। এছাড়া বাংলাদেশে স্বর্ণ-রৌপ্যের আমদানির আগে বা আমদানির সময় এর ব্যবহার বা ব্যবসায়ের ওপর সরকার প্রয়োজনে শর্তারোপ করতে পারিবে।
[৯] খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ বা বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি কোনো সিকিউরিটিজ বাংলাদেশের বাইরে গ্রহণ করতে বা প্রেরণ করতে পারবেন না। বাংলাদেশের বাইরে নিবাসী কোনো ব্যক্তির অনুকূলে কোনো সিকিউরিটিজ হস্তান্তর বা সৃষ্টি বা সিকিউরিটিজের ওপর অর্জিত স্বার্থ হস্তান্তর করা যাবে না। তবে অনিবাসী কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অর্জিত সিকিউরিটিজের মালিকানার প্রমাণ হিসাবে সিকিউরিটিজ সার্টিফিকেট বাংলাদেশের বাইরে নেয়ার ক্ষেত্রে এ বিধান কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।
[১০] বাংলাদেশের কোনো রেজিস্টার বা ডিপজিটরি থেকে কোনো সিকিউরিটিজ বাংলাদেশের বাইরের কোনো রেজিস্টারে বা ডিপজিটরিতে হস্তান্তর বা স্থানান্তর করা যাবে না এবং সিকিউরিটিজ ইস্যু, হস্তান্তর বা অন্য কোনো বিষয় সংক্রান্ত কোনো ক্ষেত্রেই সিকিউরিটিজ রেজিস্টার বা ডিপজিটরি বা বহিতে বিদেশি ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা যাবে না, যাতে বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোনো সিকিউরিটিজের সঙ্গে বিদেশে নিবন্ধিত সিকিউরিটিজের বিনিময় সহজতর হয়। তবে বিদেশি ঠিকানা প্রতিস্থাপন করে দেশি ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা যাবে এবং বিদেশি ঠিকানা সম্পৃক্ত কোনো লেনদেনের অনুমতি এই ধারার অধীনে প্রদত্ত হলে সেই ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা যাবে।
[১১] খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-এর অনুমোদন ছাড়া কোনো সিকিউরিটিজ ইস্যু বা হস্তান্তর বা লেনদেন কিংবা কোনো সিকিউরিটিজ বাংলাদেশের বাইরে কোনো এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা যাবে না বা বাংলাদেশের বাইরে কোনো ডিপজিটরিতে স্থানান্তর করা যাবে না। তবে বাংলাদেশের বাইরে কোনো এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজ হস্তান্তর, ধারণ ও তালিকাভুক্তিকরণে এ বিধানাবলি কার্যকর হবে না।