চড়া দামে নাজেহাল মানুষ ভারতে অন্তর্বর্তী বাজেটে ঘোষণা
বিশ্বজিৎ দত্ত : [১] ভারতের লোকসভা ভোটের আগে ১ ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তী বাজেটে আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসের ব্যয় বরাদ্দের অনুমোদন চাইবে কেন্দ্র। সাধারণত অন্তর্বর্তী বাজেটে নতুন করে কোনও কর প্রস্তাব দেওয়া বা প্রকল্পের ঘোষণা হয় না।
[২] জিনিসপত্রের চড়া দামে নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকের ক্ষেত্রে খাদ্য-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বেরিয়ে যাচ্ছে রোজগারের বেশির ভাগটা। ফলে ধাক্কা লাগছে অন্যান্য জিনিসের বিক্রিবাটায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে আসন্ন অন্তর্র্বতী বাজেটে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রেখেই চাহিদা বৃদ্ধির দাওয়াই দিতে পারেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
[৩] সে ক্ষেত্রে সরাসরি মানুষের হাতে নগদ তুলে দেওয়া অথবা করের স্তরে রদবদল ঘটিয়ে তার বোঝা কমানো এবং স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাবদ ছাড় বৃদ্ধি এর উপায় হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। একাংশ বলছেন একশো দিনের কাজের বরাদ্দ বাড়ানো এবং কৃষকদের আরও বেশি অর্থ দেওয়ার কথাও।
[৪] সাধারণত অন্তর্বর্তী বাজেটে নতুন করে কোনও কর প্রস্তাব দেওয়া বা প্রকল্পের ঘোষণা হয় না। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন, ২০১৯ সালে ভারতের বাজেটে কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার।
[৫] ডেলয়েট ইন্ডিয়ার পার্টনার রজত ওয়াহি যেমন বলছেন, মানুষ দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্ত পণ্য ব্যবহার করে, কাঁচামালের দাম বাড়ায় সেই সব ভোগ্যপণ্যের দর ৮%-১০% বাড়িয়েছে সংস্থাগুলি। রয়েছে বিশ্বে জোগান শৃঙ্খলের সমস্যা। তার উপরে সামগ্রিক ভাবেই মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ায় আতান্তরে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এই ছবি শুধু গ্রামেরই নয়। শহরেও আয়ের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা শ্রেণি তার আঁচ টের পাচ্ছেন। ফলে বাড়ছে ঋণ খেলাপও।
[৬] তার উপরে সরকার নিজেও চলতি অর্থবর্ষের আর্থিক বৃদ্ধির প্রথম আগাম পূর্বাভাসে কৃষি ক্ষেত্রে মাত্র ১.৮% বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। অর্থাৎ, সরকার যে প্রত্যাশা করেছিল তা দেখা যাচ্ছে না। ওয়াহি বলছেন, চড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণেই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা যায়নি। গত এপ্রিল-নভেম্বরের শিল্পোৎপাদনের পরিসংখ্যান আবার বলে দিচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমায় তার উৎপাদনও মাথা নামিয়েছে। স্বল্পমেয়াদির ক্ষেত্রে তা বাড়লেও, সেটা হয়েছে মূলত গত বছরের নিচু ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে। ফলে সমাজের এক শ্রেণি যেখানে কার্যত ধুঁকছেন, সেখানে ৪-৫ মাস অপেক্ষা করা কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চের মুখ্য অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র কুমার পন্থ। সে ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করা না হলে যদি পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়, তা ভেবেই হয়তো অন্তর্বর্তী বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
[৭] ডেলয়টের আর এক পার্টনার সঞ্জয় কুমারের দাবি, এই সব কারণে নতুন কর কাঠামোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা, গৃহঋণের সুদে কর ছাড়ের কথা ভাবা হতে পারে। অনেকে আবার বলছেন একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়াও, পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা এবং অন্যান্য দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচিগুলিতে অতিরিক্ত অর্থ জোগানো হতে পারে।