অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে
প্রান্ত চ্যাটার্জি
৭ জানুয়ারী ২০২৪-এ, বাংলাদেশ তার ১২ তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যার ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ (এএল) দলের জন্য একটি দুর্দান্ত বিজয় হয়। বিরোধী দল ও কিছু সমালোচকদের দুর্নীতি, স্বৈরাচারীতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন বাংলাদেশের জনগণ টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগকে পুনর্র্নিবাচিত করতে বেছে নিল? উত্তরটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জন করেছে, সেইসঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে যা তিনি একটি অশান্ত অঞ্চলে নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ নয় যে তার শাসনে ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বেছে নিয়েছে। আমরা যদি রাশিয়ার দিকে তাকাই, ভøাদিমির পুতিন ২০০০ সাল থেকে তাদের নাগরিকদের দ্বারা ক্রমাগত নির্বাচিত হয়ে আসছেন, ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত চার বছরের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ বাদে। পুতিন রাশিয়ানদের মধ্যে উচ্চ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, যারা তাকে রাশিয়ানদের পুনরুদ্ধারের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন। একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসাবে মর্যাদা, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ হুমকির মুখে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। পুতিন রাশিয়ান অর্থনীতির আধুনিকীকরণ ও বৈচিত্র্যের পাশাপাশি দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সক্ষমতাকে শক্তিশালী করার একটি উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা অনুসরণ করেছেন।
একইভাবে বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার অর্জন ও ভিশনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যিনি বাংলাদেশকে একটি দরিদ্র ও সাহায্য-নির্ভর দেশ থেকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সঙ্গে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয়, গত এক দশকে বার্ষিক গড় ৬.৫% ও ২০২৩ সালে ৮.২% এ পৌঁছেছে। বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাস, মানব উন্নয়ন সূচকগুলোর উন্নতি ও নারীর ক্ষমতায়নেও চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি করেছে প্রান্তিক গোষ্ঠী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় হয়ে উঠেছে।
শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে, বাংলাদেশও নেক্সট ইলেভেন (এন-১১) দেশগুলোর গ্রুপে যোগ দিয়েছে, যেগুলো ব্রিকস দেশগুলোকে অনুসরণ করে (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত) চীন ২১ শতকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এন-১১ ২০০৫ সালে গোল্ডম্যান স্যাকস দ্বারা প্রবর্তিত একটি শব্দ, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও ভিয়েতনাম। এই দেশগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন বড় ও তরুণ জনসংখ্যা, গতিশীল ও বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি ও কৌশলগত অবস্থানগুলো ভাগ করে নেয়। বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগের জন্য একটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেইসঙ্গে বিশ্ব মঞ্চে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ।
একটি অস্থিতিশীল ও জটিল অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা বাংলাদেশের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ভারত, মায়ানমারের সঙ্গে সীমানা ভাগ করে ও চীন সহ এই শক্তিগুলোর সঙ্গে পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে তার সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশও সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও মৌলবাদের হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে সরকার দৃঢ় ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। শেখ হাসিনাও দুর্নীতির জন্য জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেছেন বিচার বিভাগ, সংসদ ও মিডিয়ার মতো গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার ও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
নির্বাচনের ফলাফল দেখায় যে বাংলাদেশের জনগণ আগামী পাঁচ বছরের জন্য আওয়ামী লীগকে তার উন্নয়ন এজেন্ডা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি স্পষ্ট ম্যান্ডেট দিয়েছে। আ.লীগ ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর ২০২৩ সালের নির্বাচনের জন্য তার প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করে, যাতে অনেক নতুন মুখ, তরুণ নেতা ও নারী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত ছিল, এএল এছাড়াও জাতীয় পার্টি (এরশাদ), শ্রমিকদের মতো কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে জোট গঠন করে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকাশ ধারা বাংলাদেশ, তাদের সমর্থনের ভিত্তি প্রসারিত করতে ও একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে।
আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্যের রূপরেখা দিয়েছে। ইশতেহারে বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়েছে ও আগামী পাঁচ বছরের জন্য পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফোকাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে :
* ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বি-সংখ্যার জিডিপি বৃদ্ধির হার অর্জন করা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-আয়ের দেশে পরিণত হওয়া।
* পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ করা পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর ও ঢাকা মেট্রো রেল, যা দেশের অবকাঠামো ও সংযোগ বৃদ্ধি করবে।
* শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিষেবার গুণমান অ্যাক্সেস বৃদ্ধি করা সকল নাগরিকের, বিশেষ করে নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করা।
* গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করা ও সকল ক্ষেত্রে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
* শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার সংস্কৃতির প্রচার করা সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করা।
* পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা।
* আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রভাব বিস্তার করা সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
বাংলাদেশের জনগণ এসব লক্ষ্য ও আকাক্সক্ষা পূরণের দায়িত্ব আওয়ামী লীগকে অর্পণ করেছে ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থা প্রকাশ করেছে। বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ তার এজেন্ডাটির সুষ্ঠু ও সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে জনগণকে সজাগ ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
২০২৪ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বাংলাদেশের জনগণ জাতির পিতার উত্তরাধিকারকে সম্মান করতে ও তার কন্যা শেখ হাসিনার পথ অনুসরণ করতে বেছে নিয়েছে, যিনি তার জীবন জাতির সেবায় উৎসর্গ করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ সঠিক সরকারকে বেছে নিয়েছে ও বিশ্বকে দেখিয়েছে যে তারা সমৃদ্ধি ও গৌরবের দিকে অগ্রসর হতে প্রস্তুত।
লেখক : একজন প্রাক্তন আইসিসিআর স্কলার, কলামিস্ট, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, এনআইটি দুর্গাপুর, ভারত।
সূত্র : ডেইলি অবজার্ভার। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ