শীতের বিরুদ্ধে গৃহহীন মানুষের সংগ্রাম
নীল রায় : গৃহহীনতার সমস্যা শুধু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো ধনী ও উন্নত দেশগুলোকেও মোকাবেলা করছে। আকাশচুম্বী ভবনের পাশে যাত্রীবাহী শেড বা ফুটপাতে কম্বলের নিচে দরিদ্র মানুষদের কুৎসিত বৈপরীত্য সেটা ঢাকা হোক বা ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক বা লন্ডন প্রকৃতপক্ষে আধুনিক সভ্যতার জন্য অপমানজনক। বাংলাদেশে নদীভাঙন ও ঘূর্ণিঝড়ের অন্তত একটি অজুহাত রয়েছে যা শত শত বা হাজার হাজার পরিবারকে রাতারাতি গৃহহীন করে। গৃহহীনতার পেছনের আরেকটি কারণ হলো মানুষের ব্যাপক দারিদ্র্য, বিপরীতে কয়েক হাতে সম্পদের বিশাল পাহাড়। দরিদ্র লোকেরা আরও দরিদ্র হয়, এমনকি তাদের বসতভিটাও বিক্রি করে ও অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য খাস বা আত্মীয়দের জমিতে চলে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জীবিকার জন্য নগর কেন্দ্রে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট গৃহহীন বা ভাসমান মানুষ যাদের ঘরে থাকার জায়গা নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যে বাংলাদেশ আবাসন প্রকল্প আশ্রয়নে গর্ব করতে পারে, যার আওতায় প্রায় ৮.৮ মিলিয়ন গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। এগুলো সরকারি বা খাস জমিতে নির্মিত বেশ শালীন বাসস্থান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বৈরী জলবায়ু আগের তুলনায় দ্রুত গতিতে গৃহহীনতার কারণ হচ্ছে ও এখনও ১.৮ মিলিয়ন মানুষ বস্তিতে বাস করছে ও ২২,১২৫ জন গৃহহীন ছিলো, প্রাথমিক জনসংখ্যা ও গৃহায়ন শুমারি ২০২২ এর রিপোর্ট অনুসারে। এটি বেশ রক্ষণশীল দেখায়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নথিতে একটি অনুমান করা হয়েছে যে ২০২১ সালের মধ্যে দেশে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ৮.৫ মিলিয়ন হবে। হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) অনুসারে, সেই সময়ে ৫.০ মিলিয়ন গৃহহীন মানুষ ছিলো। যদি আশ্রয়ণ প্রকল্প মানুষ নয়, ৮.৫ মিলিয়ন পরিবারের জন্য ব্যবস্থা করে থাকে, তাহলে সুবিধা ভোগকারী মানুষের সংখ্যা বহুগুণ বেশি হবে। এর মানে খুব কমই কোনো গৃহহীন মানুষ থাকা উচিত। প্রকৃতপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদযাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী ১২টি জেলা ও ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন। গৃহহীনতাকে অতীতের একটি ঘটনা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার সংকল্প অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
তবে, নগর কেন্দ্রে গৃহহীন মানুষের প্রবাহ এখনও অব্যাহত রয়েছে। গৃহহীন মানুষের পরিসংখ্যান বিতর্কিত হতে পারে তবে ভাসমান মানুষ, পথশিশু ও কিছু মানসিকভাবে অস্থির মানুষ এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সময়ে বাকী খাবারের জন্য ডাবের ভিতর দিয়ে গুঞ্জন চালাচ্ছেন তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ছবি এতোটাই করুণ যে এই অসহায় মানুষের জন্য অনেকের হৃদয় গলে যায়। এই আশ্রয়হীনদের মধ্যে অনেকেই, বিশেষ করে শিশুরা, শপিং মল, দোকান, এটিএম বুথ ও অফিস বিল্ডিংয়ের আগে ফুটপাথ বা খোলা জায়গায় ঠান্ডা কামড়ানো থেকে কাঁপছে। তারা স্বল্প কাপড়, ন্যাকড়া এমনকি বস্তা দিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। একটি ছবি যা বেশ ছাপ ফেলেছে তা হলো একটি কিশোর ছেলে ও একটি কুকুরের মধ্যে বন্ধন, উভয়েই ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করার জন্য একে অপরের শরীরের উষ্ণতা ভাগ করে নিয়ে একটি কম্বলের নীচে শুয়েছিলো।
দাতব্য সংস্থা ও ক্লাব কম্বল বিতরণ গরম কাপড় ও কম্বল বিতরণে কিছু অর্থোপার্জিত ব্যক্তিও এই ধরনের সংস্থায় যোগ দিতে এগিয়ে আসতে পারে। এদেশে সরকার পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে এমন দরিদ্রদের আশ্রয় দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। যুক্তরাজ্যে গৃহহীনদের দেখাশোনাকারী একটি দাতব্য সংস্থা শেল্টারের ২০১৯ সালের অনুমান অনুসারে, ইংল্যান্ডে ২৮০,০০০ গৃহহীন লোক ছিলো। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১২,৩০০ জন রুক্ষ পরিবেশে ঘুমিয়েছিলেন যা অনেক বেশি প্রতিকূল। আরও ১২,০০০ টিন, শেড, গাড়ি, তাঁবু ও রাতের বাসে ঘুমিয়েছিলো। গৃহহীনদের একটি সিংহভাগ অস্থায়ী বাসস্থান ও বাড়িতে তাদের আশ্রয় খুঁজে পায়। নিঃসন্দেহে, অগ্রণী আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে গৃহহীনদের পুনর্বাসন এই ধরনের লোকদের জন্য অন্য যে কোনও কল্যাণমূলক কর্মসূচির চেয়ে ভালো। কিন্তু ঢাকার মতো শহরে নতুন আগতদের নারী ও শিশুদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু অস্থায়ী আশ্রয়ের প্রয়োজন হয়। দরিদ্রদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের আগে সরকার এ ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারে।
হরষৎধঃধহযধষফবৎ২০০০@ুধযড়ড়.পড়স. সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ