ঢাকার গণপরিবহন ঢেলে সাজাতে নতুন ৫ হাজার বাস নামানোর দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যানজট ও যাত্রী ভোগান্তি কমাতে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হলে রাজধানীর মাত্র ৩৫ শতাংশ যাত্রী এ সব অবকাঠামোর সুবিধা পাবেন। আর মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে উন্নত বাস নামাতে পারলে সুবিধা পাবেন ৬৫ শতাংশ যাত্রী।
[২] স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অংশ হিসেবে রাজধানীর পুরাতন ‘লক্কড়-ঝক্কড়’ বাস উঠিয়ে দিয়ে সরকারি বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) ব্যবস্থাপনায় একটি কোম্পানির অধীনে নতুন ৫ হাজার উন্নত বাস নামানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। [৩] সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যানজট ও যাত্রী ভোগান্তি কমাতে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হলে রাজধানীর মাত্র ৩৫ শতাংশ যাত্রী এ সব অবকাঠামোর সুবিধা পাবেন। আর মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে উন্নত বাস নামাতে পারলে সুবিধা পাবেন ৬৫ শতাংশ যাত্রী।
[৪] শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে গত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে এই বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ করে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণে দেশব্যাপী বৈপ্লবিক পরিবর্তন হলেও পরিবহন খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সড়কে বিশৃঙ্খলা, লক্বর-ঝক্কড় বাসের কারণে নিরাপদ যাত্রী সেবা নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
[৫] তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নগরবাসী দীর্ঘ সময় ধরে অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোংরা আর্বজনায় ভরপুর বাসে প্রতিদিন যাতায়াত করছে। যানজট, জনজটে আটকা পড়ে প্রতিদিন কর্মক্ষম মানুষের লাখো কোটি টাকার শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য, গণপরিবহনগুলোকে মুড়িরটিন বানিয়ে ইচ্ছেমতো যাত্রী হয়রানি চলছে। ভয়াবহ বায়ুদূষণ ও ধূলাদূষণের শিকার হচ্ছে নগরবাসী।
[৫] নতুন সরকারের পরিকল্পনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছোট ছোট যানবাহনের পরিবর্তে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি কোম্পানির অধীনে অথবা পিপিপির অধীনে উন্নত মানের ৫ হাজার নতুন বাস নামানোর দাবি জানাচ্ছি। একই পদ্ধতিতে সারা দেশে স্মার্ট বাস সার্ভিস গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য দাবি জানাই, বলেন তিনি। পরিবহন-সংক্রান্ত সব ধরনের সিদ্ধান্তে মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে জনসাধারণের স্বার্থের বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে মনে করেন মোজাম্মেল হক।
[৬] তিনি বলেন, অনেক বাস কোম্পানি একটি বাস নিয়ে রাস্তায় নেমে ৮০০ বাসের মালিক হওয়ার নজির আছে। অথচ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাস পরিচালনা করতে না পেরে ইজারা দিচ্ছে । রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব বাসের সংখ্যা কমছে।
[৭] আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে আর্ন্তজাতিক বাজার থেকে বাস কোম্পানি পরিচালনায় দক্ষ অভিজ্ঞ কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা করা গেলে বিআরটিসিকে লাভজনক করার পাশাপাশি যাত্রী পরিবহন সেবার মান উন্নত করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান ডিটিসিএ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করে পিপিপি ভিত্তিতেও বাস চালানো যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
[৮] এ সময় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চালু হওয়া বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় নগর পরিবহন নামে কয়েকটি রুটে বাস সার্ভিস চালু করা হলেও তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
[৯] সদরঘাট থেকে গাবতলী আমিন বাজার পর্যন্ত চালু হওয়া ওয়াটার বাস সার্ভিসও বন্ধ হয়ে গেছে। নগর পরিবহনে ই-টিকিটিং সার্ভিসও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে নগরীর যাত্রীরা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ইচ্ছার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ইজ্জত ও মর্যাদা নিয়ে এসব পরিবহনে যাতায়াত করতে পারছে না।
[১০] জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগীতা সংস্থার (জাইকা) সমীক্ষার উদ্বৃতি দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, বর্তমানে রাজধানীতে দৈনিক ৪ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হওয়ায় বাস ব্যবসার ব্যাপক সুযোগ আছে। চাঁদাবাজি বন্ধ করার পাশাপাশি ডেডিকেটেড বাস লেন চালু করা গেলে বাস সেবার মাধ্যমে নগরীর পরিবহন চিত্র রাতারাতি পাল্টে দেওয়া সম্ভব।
[১১] সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য লুৎফুন নেসা খান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক, মাহমুদ হাসান রাসেল, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন, মনজুর হোসেন ইশাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
[১২] যানজট ও জনজট নিরসনে ঢাকা ওপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ দেন মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন হলেও প্রধান শহর নিউইয়র্ক। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ হলেও প্রধান শহর করাচি। ভারতের রাজবাদী নয়া দিল্লী হলেও প্রধান শহর মুম্বাই। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ট্যানেল চালুর সুবাদে চট্টগ্রাম শহরের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা গেলে এবং প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত সেখানে সম্প্রসারণ করা গেলে ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ কমে আসবে।
[১৩] নেতৃত্বের অযোগ্যতা, পরিচালনার অদক্ষতা, মনিটরিংয়ের অভাব ও রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ঠিকাদারের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে সড়ক নির্মাণ ও মেরামত, নৌপথ খনন, রেলপথ নির্মাণ ও মেরামত এবং লোকোমোটিভ ও কোচ কেনাসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নে অন্যান্য দেশের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়তি খরচের নামে দুর্নীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মোহাম্মেল হক। [১৪] পরিবহন অবকাঠামো খাতের প্রতিটি প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নতুন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষার দাবি জানান তিনি।