আইএমএফ’র ঋণ: তৃতীয় কিস্তির শর্ত পূরণে বাংলাদেশ এগিয়ে
সোহেল রহমান : [১] ব্যাপক টানা-পোড়েনের মধ্য দিয়ে গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ প্রাপ্তির পর তৃতীয় কিস্তির শর্ত পূরণে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ে গত বছরের (২০২৩ সাল) ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের যেসব শর্ত পূরণ করা দরকারÑ এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি চারটি পূরণ হয়েছে বলে মনে করছে সরকার।
[২] অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের জন্য পর্যালোচনা মিশন আগামী মার্চে ঢাকায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সরকারের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অগামী মে-তে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করা হতে পারে।
[৩] অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, আগের মতোই ন্যূনতম নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এটি একটি বাধ্যতামূলক শর্ত। তবে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে, এর আগের কিস্তির আগে যা পূরণ হয়নি।
[৪] জানা যায়, সমাপ্ত ২০২৩ সালের শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভের জন্য কমপক্ষে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এর থেকে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার রিজার্ভ কম রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রিজার্ভের পার্থক্য কমে যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
[৫] প্রসঙ্গত: ন্যূনতম রিজার্ভ ও রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ৬৮১ মিলিয়ন ডলারের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দেয় আইএমএফ বোর্ড।
[৬] এমতাবস্থায়, যেহেতু গত বছরের জুনে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে আইএমএফ-এর স্টাফ মিশন ছাড় দিয়েছিল, সে ধারাবাহিকতায় রিজার্ভের ব্যবধান কম হওয়ায় তৃতীয় কিস্তি ছাড় পেতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
[৭] সাধারণত কোনো ঋণপ্রার্থী দেশ কোনো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে আইএমএফ বোর্ডের কাছ থেকে মওকুফ চাওয়া হয়। অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রার জন্য মওকুফ চাওয়ার প্রয়োজন হবে না বলেও মনে করছেন তারা। [৮] জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে এনবিআর ও নন-এনবিআর করসহ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। সরকার ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।
[৯] এছাড়া তৃতীয় কিস্তির ঋণের শর্তগুলোর আরেকটি হচ্ছেÑ গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের বাজেট ঘাটতি যেন ৯০ হাজার ৫২০ কোটি টাকার বেশি না হয়।
[১০] অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘাটতি ছিল মাত্র ১২ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এমতাবস্থায় বাজেট ঘাটতি আইএমএফ’র সর্বোচ্চ সীমার মধ্যেই থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
[১১] এদিকে ঋণের পরিমাণগত ও নির্দেশক লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াও আইএমএফ’র কিছু কাঠামোগত শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছেÑ পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য পর্যায়ক্রমে মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
[১২] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, আগামী মার্চের মধ্যে প্রথম মূল্য সমন্বয় করা হবে। এরপর থেকে বাংলাদেশ প্রতি তিন মাস পরপর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেট্রোলিয়ামের দাম সমন্বয় করবে। [১৩] আরেকটি কাঠামোগত শর্ত হচ্ছেÑ সরকার গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ত্রৈমাসিক জিডিপি ডেটা প্রকাশ করবে।
[১৪] জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনের কারণে তথ্য প্রকাশে পিছিয়ে পড়ার পর জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রতিবেদন প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।