আহা জলপাই। নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হোল এই নিরীহ গাছকেও।
ফরিদা আখতার
জলপাই (ঙষরাব, ঙষবধ বঁৎড়ঢ়ধবধ) ফিলিস্তিনের প্রধান কৃষি ফসল। পশ্চিম তীর এবং গাজায় ৫৭% জমিতে প্রায় ১ কোটি গাছ লাগানো হয়েছে, যা প্রধানতঃ স্থানীয় জাতের এবং খরা সহনশীল। ফিলিস্তিনের মাটিতে ৯ জাতের জলপাই উৎপাদিত হয়, এগুলো হচ্ছে চামেলি, জেব্বা, মাঞ্জোলিনো, নাবালী, বালাদী, নাবালী মহাসসান, শামী এবং সৌরি এবং কে-১৮। জলপাই বেশ কয়েক রংয়ের হয়, যেমন সবুজ, সাদা, কালচে, হলুদ। এই জলপাই ফি*লি*স্তিনের মানুষের কাছে তাদের সংগ্রামের প্রতীক, এবং তাদের স্বাস্থ্য, এবং তাদের বংশানুক্রমিক পেশার প্রতীক । এই গাছ তাদের পরিবারের অংশ।
অথচ এই জলপাই গাছ ইজরায়েলের হিংস্র থাবা থেকে মুক্তি পায় নি। তারা নারী ও শিশুদের যেমন করে টার্গেট করে হত্যা করেছে তেমনি জলপাই গাছও টার্গেট করে উপড়ে ফেলেছে, কিংবা জ্বালিয়ে দিয়েছে। ১৯৬৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ফি*লি*স্তিনের ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে ৮ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি গাছ উপড়ে ফেলেছে। দফায় দফায় বিভিন্ন সময়ে জলপাই গাছ উপড়ানো চলছে। ২০২১ সালেও ৯০০০ গাছ উপড়ানো হয়েছে। এগুলো প্রধানতঃ করা হচ্ছে সেটলারদের জন্যে জমি দখলের জন্য। জলপাই কৃষকদের চোখের সামনে গাছগুলো পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের কমপক্ষে এক লক্ষ পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস জলপাই উৎপাদন। জলপাই তেল (ঙষরাব ঙরষ) উৎপাদনের জন্যেই চাষ করা হয়। ২০১৪ সালের হিশাবে দেখা যায় ১০৮,০০০ টন জলপাই থেকে ২৪,৭০০ টন অলিভ অয়েল উৎপাদন করা হয়েছিল। কাজেই ফিলিস্তিনের অর্থনীতির জন্যে জলপাই খুব গুরুত্বপুর্ণ। শতকরা ৯% জলপাই আচার এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়।
গত বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখের পর থেকে ইজরায়েল নির্বিচার মানুষ হত্যা করেছে তেমনি উপড়ে ফেলেছে জলপাই গাছ। অক্টোবর মাস থেকে জলপাই পাড়ার মৌসুম। এই সময় কৃষকদের জলপাই মাঠে যেতে দেয়া হয়নি। অন্যদিকে যখন সারা বিশ্বের নজর গাজার দিকে, তখন ইজরায়ের সেটলাররা পশ্চিম তীরে জলপাই কৃষকদের জলপাই গাছের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা মানুষ হত্যার পরিসংখ্যান দেখছি এবং কাতর হচ্ছি, কিন্তু জলপাই গাছের উপড়ানোও যে এই মানুষের বেঁচে থাকার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে তা নিয়ে ভাবছি না। লেখক: মানবাধীকার ও উন্নয়ন বিষয়ক নেত্রী।