এপার্টমেন্টে লাকড়ি উঠেছে!
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : ফেসবুকে একজন লিখেছে, ‘রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অভিজাত ফ্ল্যাটগুলোতে লাকড়ি উঠেছে এবং এটা উন্নতিও বটে’। যদিও কটাক্ষ করে বলা, কিন্তু এর মধ্যে বাস্তবতা আছে। অনেকেই রান্না না করতে পেরে প্রশ্ন করছেন, আমরা কি হাওয়া খেয়ে বাঁচবো? শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকের একপাতাজুড়ে ছিলো গ্যাস
সংকটের খবর। প্রধান শিরোনাম ছিলো, ‘গ্যাসের অভাবে শিল্পে খেসারত, ঘরে ঘরে হাহাকার’। ছোট কিছু শিরোনাম ছিলো এরকমÑ ‘জ্বলে না চুলা চলছে বাসা বদল, বেকায়দায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যহত উৎপাদন’, ‘ক্রুদ্ধ ক্রেতারা বিকল্প জ্বালানিতে খরচ বাড়ছে’। পরিস্থিতি সত্যি ভয়াবহ।
নির্বাচনের পরপর এমন অবস্থা নিয়ে সরকার নিজের জন্য কতোটা বিব্রতকর হিসেবে বিবেচনা করে আমরা জানি। মানুষের জন্য খুব কষ্টের এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের জন্য বড় আঘাত। সরকারি লোকজন যথারীতি শীতকে দায়ী করে পার পেতে চাচ্ছে। শীতের সময় তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পাইপলাইনে তরল পদার্থ জমে গিয়ে গ্যাস প্রবাহের চাপ কমে যায়। প্রতিবছরের মতো এবারও একই রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছে জা¡লানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলা। কিন্তু বিষয়টি কি সত্যিই তাই? শুধু আবাহাওয়াগত কারণেই কি এমন হচ্ছে। অনেকদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা যা বলে আসছিলো হয়তো তার কিছু আংশিক প্রমাণ ইতোমধ্যেই আমরা পাচ্ছি। আমাদের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেছে।
কিন্তু কেন সেটা কমেছে? কারণ গ্যাসক্ষেত্র থেকে অনুসন্ধান কমে গেছে। অন্য একটি কারণ হচ্ছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের কম আমদানি। বিদ্যুৎ চহিদা কমলেও শিল্প ও আবাসিক খাতে গ্যাস পাচ্ছে না গ্রাহকরা। গ্যাস সংকটের কারণ নিজস্ব উৎপাদন কমিয়ে আমদানি নির্ভরতা বাড়ানো। এটি কি ইচ্ছা করেই করা হলো নাকি কমিশন পাওয়ার ধান্দা? এমন কিছু কথা নাগরিক সমাজে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে অতিরিক্ত আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারকরা সরকার এবং দেশকে একধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমদানি করে চাহিদা পূরণ করায় বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। পেট্রোবাংলার পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ, সার, সিএনজিসহ ৭টি খাতে মোট চাহিদা দাঁড়াবে ৩৭১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। পেট্রোবাংলার হিসাবে বর্তমানে প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু বিষেশজ্ঞরা মনে করছেন এই ঘাটতি আরো বেশি যা ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। বাংলাদেশের নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ না থাকা এবং আমদানি নির্ভরতার বৃদ্ধির কারণেই সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছে কিন্তু নিজস্ব কয়লা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি। সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলন এবংঅনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ভারত ও মিয়ানমার ভালোভাবে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণেই গ্যাসের সংকট সহসা কাটবে বলে আমরা মনে করি না। ২০১০ সালে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যেসব পকিল্পনা ছিলো সব ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং ২০১২-১৩ সালে পুরোটাই আমদানি নির্ভর পরিকল্পনায় চলে গেছে। আমাদের জ্বালানি খাত পুরোপুরি ভাবে এখন আমদানি নির্ভর হয়ে গেছে এবং এটি এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কোনো দ্রুত সমাধান নেই বলেই সবাই ধারণা করছে। তবে অনুসন্ধান বাড়ানো হবে সবচেয়ে বড় কাজ যেটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের সর্বোত্তম পন্থা। পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা’র ফেসবুক পেইজের ভিডিও কন্টেন্ট থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন সঞ্জয় চন্দ্র দাস