চলতি অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন এলএনজি ও সার আমদানিসহ ২ হাজার ৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ১২ প্রস্তাব অনুমোদন
সোহেল রহমান : [১] স্পট মার্কেট থেকে লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) কার্গো আমদানি এবং কৃষি ও শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য মোট ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানিসহ ১২টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মেয়াদে ক্রয় কমিটির প্রথম বৈঠক। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
[২] মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্পট মার্কেট থেকে কেনা এক এলএনজি কার্গো (৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ) সরবরাহ করবে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা নিজস্ব অর্থায়নে এ কার্গো ক্রয় করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৮৮ মার্কিন ডলার হিসেবে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ এতে মোট ব্যয় হবে ৪৭০ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
[৩] সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির চারটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রস্তাবে, প্রতি মেট্রিক টন ৫৮৯ ডলার হিসাবে সৌদিআরব-এর মা’এডেন থেকে ১ম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২৫৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
[৪] দ্বিতীয় প্রস্তাবে, প্রতি মেট্রিক টন ৩৮৬ ডলার হিসাবে মরক্কোর ওসিপি এসএ থেকে ৩য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
[৫] তৃতীয় প্রস্তাবে, প্রতি মেট্রিক টন ৫৪৭.৫০ ডলার হিসাবে মরক্কোর একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩য় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২৪০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
[৬] চতুর্থ প্রস্তাবে, প্রতি মেট্রিক টন ৩০২.১০ ডলার হিসাবে রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক কর্পোরেশন প্রডিনটর্গ থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রেক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৯৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
[৭] সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মোট ৯০ হাজার টন সার ইউরিয়া সার আমদানি এবং স্থানীয় পর্যায়ে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের চারটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রস্তাবে, প্রতি মেট্রিক টন ৩১৩.৪২ ডলার হিসাবে কাতার-এর মুনতাজাত থেকে ১০ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কাতার থেকে মোট ৪ লাখ ৮০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি সই করা হয়েছে।
[৮] দ্বিতীয় প্রস্তাবে, প্রতি মেট্রিক টন ৩১৬.৬২৫ ডলার হিসাবে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ১৩ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ৪৮ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কাফকো থেকে মোট সাড়ে ৫ লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি সই করা হয়েছে।
[৯] তৃতীয় প্রস্তাবে, সৌদি আরব-এর সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ১১তম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছওে সৌদি আরব থেকে মোট ৫ লাখ ১০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি সই করা হয়েছে।
[১০] চতুর্থ প্রস্তাবে, প্রতি মেট্রিক টন ৩১৩.৪২ ডলার হিসাবে সৌদি আরব-এর সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ১২তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে মোট ৫ লক্ষ ১০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি সই করা হয়েছে।
[১১] সূত্র জানায়, বৈঠকে ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার রাইস ব্রাণ তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনটি লটে এ তেল কেনা হবে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে স্থানীয় মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড (৫০ লাখ লিটার) মজুমদার ব্রাণ অয়েল মিলস লিমিটেড (৫০ লাখ লিটার) ও আলী ন্যাচারাল অয়েল মিলস অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (২০ লাখ লিটার) এ তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার তেল ১৫৮ টাকা দরে এতে মোট ব্যয় হবে ১৮৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
[১২] জানা যায়, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে টিসিবি কর্তৃক ভোজ্য তেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৮ কোটি ৮০ লাখ লিটার। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ লিটার।
[১৩] সূত্র জানায়, বৈঠকে টিসিবি কর্তৃক ২০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের দুটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ভারত-এর উমা এক্সপো প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রতি কেজি ১০১.১৩ টাকা দরে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানিতে ব্যয় হবে ৯৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
[১৪] অপর প্রস্তাবে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে প্রতি কেজি ১০৫.৪৫ টাকা দরে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল সরবরাহ করবে বগুড়ার রায় এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ঢাকার নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ১০৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
[১৫] বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে টিসিবি কর্তৃক মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ১ কোটি ৫২ হাজার ৫০০ টন।