ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর শেয়ারবাজারে গতি বৃদ্ধি ডিএসইর লেনদেন ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা
মাসুদ মিয়া: [১] ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহের থেকে দেশের শেয়ারবাজার লেনদেনের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের দিনের ধারবাহিকতায় গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবারও সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসইর সূচক বেড়েছে প্রায় ২২ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। সূচক ও লেনদেনের এমন উত্থানের দিনেও ডিএসই-তে যে পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে।
[২] এছাড়া, ৩৫টি কোম্পানির শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে ক্রেতাশুন্য ছিল। তবে ক্রেতাশুন্য অবস্থায়ও প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিট চোখে পড়ার মতো লেনদেন হয়েছে।
[৩] ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে রোববার লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২১৪ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে শেষ দিকে বিক্রির চাপ কমায় প্রধান সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
পরের কার্যদিবস সোমবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে সবকটি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে প্রায় ছয় মাস পর ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। এ পরিস্থিতিতে সোমবার বিকেলে আরও ২৩ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের পর দেশের শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইস তুলার পর থেকে লেনদেনের এমন উল্লম্ফনের প্রধানতম কারণ হলো বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার তুলে নিচ্ছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাঁদের মতে, দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইসে শেয়ার পড়ে থাকায় বিনিয়োগকারীরা অস্থির হয়ে পড়েছে। এতোদিন বিশেষ প্রয়োজন থাকলেও তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি। এখন বিক্রি করার সুযোগ পেয়ে কম দামেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। বিপরীতে কম দামে সেসব শেয়ার সংগ্রহ করছে স্মার্ট বিনিয়োগকারীরা।
[৪] বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, বাজারে লেনদেন যেভাবে বেড়েছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যদি কম দামে তাদের শেয়ার বিক্রি না করতো, তাহলে সূচক গত দুই দিনে অন্তত ১০০ পয়েন্ট বাড়তো। কিন্তু রোববার সূচক পড়েছে ৯৬ পয়েন্ট। বিপরীতে গত দুই দিনে (সোমবার ও মঙ্গলবার) সূচক বেড়েছে ৩৬ পয়েন্ট।
[৫] তাঁরা বিনিয়োগকারীদের কম দামে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সামনে বাজার অনেক ভালো হবে। সুতরাং কম দামে শেয়ার বিক্রি করার কোনো মানেই নেই।
গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই এক্স ২১.৯৪ পয়েন্ট বেড়েছে। সূচকটি বাজার শেষে ৬ হাজার ২৭৬ পয়েন্টে দাড়িয়েছে। অন্যান্য সূচকের মধ্যে ডিএসইর শরীয়াহ্ সূচক ৩.৪০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১০.৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের কার্যদিবসের তুলনায়ই বাড়েনি, গত বছরের ৫ জুনের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। যা গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন।
[৬] এদিন মোট ৩৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৬টি কোম্পানির, দর কমেছে ২২৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টির।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ফরচুন সুজ, বিএসসি, অরিয়ন ইনফিউশন, দেশবন্ধু পলিমার, ব্র্যাক ব্যাংক, বিডি থাই, রূপালি ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, কর্ণফুলি ইন্সুঃ ও ফু-ওয়াং ফুড।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:-ফু-ওয়াং ফুড, ইনটেক লিঃ, খান ব্রাদার্স পিপি, মিরাকেল ইন্ডাঃ, ইউনিয়ন ব্যাংক, আলহাজ¦ টেক্স, আইএফআইসি, আমান ফীড, আইসিবি সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মি. ফা. ও জিআইবি।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:-ডরিন পাওয়ার, ইস্কয়ার নিট কম্পোজিট, কেডিএস এক্সেসরিজ, মতিন স্পিনিং, শা শা ডেনিমস, শাইনপুকুর সিরামিকস, সামিট পাওয়ার, প্রাইম ইন্সুঃ, মালেক স্পিনিং ও ম্যাকসন স্পিনিং।
[৭] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ২৯ কোটি ৭০ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২১ কোটি ৮১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
আজ সিএসইতে ২৭৫টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৬টির, কমেছে ১০৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের।
আগের দিন সিএসইতে ২৬৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ১২৩টির, কমেছিল ১১৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৬টি প্রতিষ্ঠানের।