দেশি-বিদেশিদের জন্য সীমান্ত বাণিজ্য ও তৃতীয়পক্ষ
মেহেদী রহমান : আবাসিক ও অনাবাসীদের মধ্যে ক্রস সীমান্ত বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। দুপক্ষই একে অপরের অপরিচিত। যদিও বাণিজ্য তৃতীয় পক্ষের সমর্থনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) ইস্যু করার মাধ্যমে অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে। এলসি মেকানিজমের অধীনে, রপ্তানিকারকরা পণ্য পাঠায় ও তাদের ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানিকারকদের ব্যাংকে নথি পাঠায়। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে, আমদানিকারকদের ব্যাংকগুলো পেমেন্ট করে যদি নথিগুলো ঠিক থাকে। ক্রেডিট শর্তে আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো পেমেন্টের মেয়াদপূর্তির তারিখ সহ নথিতে গ্রহণ করে। রপ্তানিকারকরা ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল; আমদানিকারক ও ব্যাংকের মধ্যে অন্তর্নিহিত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের জানার প্রয়োজন নেই। আমদানিকারকদের পক্ষে ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠিত ক্রেডিট লাইনের অধীনে ডকুমেন্টারি এলসি ইস্যু করে যার জন্য তারা সুদ সহ পরিষেবা চার্জ গ্রহণ করে যদি ক্রেডিট সীমার বাইরে আমদানি অর্থ প্রদান করা হয়। সার্ভিস চার্জ বিবেচনায় এলসি পদ্ধতি আমদানিকারকদের কাছে ব্যয়বহুল। ব্যাংকের সমর্থন ছাড়াই বিক্রয়-ক্রয় চুক্তির অধীনে পক্ষগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পাদিত হতে পারে। এই পদ্ধতিতে নগদ বা ঋণের উপর বাণিজ্য করা যেতে পারে। ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছ থেকে এক্সপোজার নেয় না তবে তারা লেনদেন পরিষেবা প্রদান করে।
রপ্তানিকারকরা আমদানিকারকদের কাছে পণ্য প্রেরণ করে ও তাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের ব্যাংকগুলোতে নথি পাঠায় যা আমদানিকারকদের কাছ থেকে অর্থপ্রদানের প্রাপ্তির পরে নথি প্রকাশ করে। এটি নথির বিপরীতে অর্থপ্রদান হিসেবে পরিচিত। ক্রেডিট শর্তে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের কাছ থেকে অর্থপ্রদানের মেয়াদপূর্তির তারিখ সহ গ্রহণযোগ্যতার প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আমদানিকারকদের কাছে নথি প্রকাশ করা হয়। ব্যাংকগুলো তাদের সমকক্ষ ব্যাংকগুলোকে ম্যাচুরিটির তারিখ জানায়। নির্ধারিত তারিখে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছ থেকে এই জাতীয় অর্থপ্রদানের প্রাপ্তির ভিত্তিতে রপ্তানিকারকদের ব্যাংকগুলোতে অর্থ প্রদান করে। বিক্রয়-ক্রয় চুক্তির অধীনে বাণিজ্যের বিপরীতে আমদানিকারকদের পক্ষে অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলো দায়ী নয়। এলসি দ্বারা বাণিজ্য পর্যায়ক্রমে বন্ধ হওয়ার পথে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য মিশ্র পদ্ধতিতে চলে। একবার বাণিজ্য রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রেই এলসি পদ্ধতির উপর নির্ভর করবে। অভ্যন্তরীণ সূত্র অনুসারে, দেশের বেশিরভাগ রপ্তানি এখন ক্রেডিট শর্তে বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এলসি পদ্ধতিতে রপ্তানি কমে যাচ্ছে। চালানের তারিখ থেকে ৪ মাসের মধ্যে আয়ের প্রত্যাবাসন সহ রপ্তানি অনুমোদিত। কার্যকরী মূলধনের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে, রপ্তানি দৃশ্যমান অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে করা উচিত। কিন্তু আমদানিকারকরা যা বলে তা রপ্তানিকারকদেরই করতে হবে।
বর্তমানে তারা ৪ মাস পর্যন্ত ক্রেডিট শর্তে রপ্তানি করার জন্য রিপোর্ট করা হয়েছে, যার জন্য মেয়াদপূর্তির তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সময় এড়াতে রপ্তানিকারকদের বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব খরচে রপ্তানি বিল ছাড় করতে হবে। এলসি ছাড়া প্রচলিত ব্যবস্থা রপ্তানিকারকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যদি না এটি রপ্তানিকারকদের খরচে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে অর্থ প্রদানের গ্যারান্টি দ্বারা আচ্ছাদিত হয়। ফলস্বরূপ আমদানিকারকরা দুটি উপায়ে খরচ সাশ্রয় করে – এলসিগুলোর জন্য খরচ ও অর্থায়নের খরচ যেহেতু তারা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে। অন্যদিকে দেশের আমদানি নীতি আদেশের শর্তে বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে আমদানি সম্পাদন করা যেতে পারে। এর মধ্যে মূল্য নির্বিশেষে শিল্প আমদানি অন্তর্ভূক্ত; একটি নির্ধারিত মূল্য সীমার মধ্যে বিক্রয়-ক্রয় চুক্তির অধীনে বাণিজ্যিক আমদানি গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বিদেশি সরবরাহকারীরা চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে খুব কমই পণ্য রপ্তানি করে। বাণিজ্য বিধিগুলো ঋণের শর্তে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু বিদেশি সরবরাহকারীরা ক্রেডিট সুবিধা না বাড়িয়ে নগদ অর্থ প্রদানের দাবি করে। ইনপুট সামগ্রী আমদানির জন্য নগদ অর্থ প্রদান করা সহজ নয়। যেমন পেমেন্ট করার জন্য আমদানিকারকদের দ্বারা ক্রেতার ক্রেডিট ব্যবস্থা করতে হবে। ক্রেতার ঋণের খরচ বহন করতে হয় আমদানিকারকদের।
উপরে উদ্ধৃত বাণিজ্য পরিস্থিতি থেকে দেখা যায় যে বাংলাদেশ মূল্য গ্রহণকারী। এটির দাম ও শর্তাবলীর সঙ্গে দর কষাকষি করার বিরল ক্ষমতা রয়েছে। রপ্তানি ঋণের শর্তে করা হয় যার জন্য ছাড়ে রপ্তানি বিল বিক্রি করে প্রাপ্য অর্থের ব্যবস্থা করা হয়। খরচ স্বাভাবিকভাবেই রপ্তানিকারকরা বহন করে। আমদানির নগদ অর্থ প্রদানের জন্য, আমদানিকারকদেরও ক্রেতার ক্রেডিট খরচ বহন করতে হবে। কেন বাংলাদেশকে বাণিজ্য লেনদেনের উভয় দিকে খরচ বহন করতে হবে তা একটি প্রশ্ন। এটা সত্য যে রপ্তানির ক্ষেত্রে ক্রেতারা যা বলে তা অনুসরণ করতে আমাদের বাধ্য থাকতে হবে। একইভাবে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের উচিত বিদেশি সরবরাহকারীদের তাদের শেষ পর্যন্ত কী করা উচিত তা করতে বলা। এ প্রেক্ষাপটে বিক্রয় চুক্তির আওতায় আমদানি শুরু করতে হবে। এতে আমদানিকারকরা এলসি কমিশন, ক্রেতার ঋণের জন্য অর্থায়ন খরচ ইত্যাদি সাশ্রয় করতে উপকৃত হবে। একটি প্রশ্ন আসে ‘সমস্যা কোথায়?’ প্রস্তাবটি সরবরাহকারীর ঋণের অধীনে আমদানির সঙ্গে সম্পর্কিত। এর অর্থ হলো রপ্তানিকারকরা ক্রেডিট প্রসারিত করে ও তাই তারা নির্দিষ্ট তারিখে অর্থপ্রদান পাবে। আমদানিকারকদের ব্যাংক অর্থপ্রদানের কোনো দায়িত্ব না নিয়েই লেনদেন সহজতর করবে।
লেনদেন সংক্রান্ত পরিষেবা ছাড়াও ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকদের অর্থদাতা হিসাবে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশের আমদানিকারকদের সঙ্গে তাদের ক্রেডিট লাইন থাকবে। ক্রেডিট লাইনের মধ্যে ব্যাংকগুলো বিদেশে সরবরাহকারীদের থেকে আমদানি বিল কিনতে পারে ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসকাউন্ট কেটে পেমেন্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে আমদানিকারকদের বাড়তি খরচের বোঝা বহন করতে হবে না। এই প্রস্তাবটি আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য মডেলের অনুরূপ যেখানে রপ্তানিকারকরা বিদেশে ব্যাংক থেকে রপ্তানি বিল ছাড় পান। আমদানি সংক্রান্ত এই প্রস্তাবটি অতিরিক্ত খরচের বোঝা ছাড়াই আমদানির সুবিধা দেয়। আমদানিকারকরা কেন এটি অনুসরণ করেন না তা একটি বিষয়। হয়তো আমদানিকারকরা প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। কিন্তু এটা সম্ভব যার জন্য আমাদের আবাসিক ব্যাংকগুলোকে বিল ডিসকাউন্টিং ও প্রারম্ভিক অর্থপ্রদানের সুবিধা বাড়ানো উচিত। এটি অবশ্যই অর্থ সাশ্রয় করবে যদি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের এক্সপোজার সহ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে আমদানি বিল কিনতে পারে।
ব্যবস্থার অধীনে রপ্তানিকারকরা তাদের বিলের পুরো মূল্য পাবেন না; বরং তারা পেমেন্ট, নেট অফ ডিসকাউন্ট পাবেন। এই প্রক্রিয়াতেই আমাদের রপ্তানিকারকরা মেয়াদপূর্তির আগে বিদেশের ব্যাংক থেকে রপ্তানি বিল পেমেন্ট পান যার জন্য তাদের মোট পেমেন্টের একটি অংশ ছাড় হিসাবে উৎসর্গ করতে হবে।বিল ডিসকাউন্টিং একটি ঐতিহ্যগত পণ্য। এটি আমদানিকারক বা রপ্তানিকারকদের উপর এক্সপোজার দিয়ে করা যেতে পারে। ফ্যাক্টরিং নামে পরিচিত আরেকটি অর্থায়ন পদ্ধতি আছে। পদ্ধতির অধীনে আমদানিকারকদের এক্সপোজার সহ রপ্তানিকারকদের মেয়াদপূর্তির আগে বিল পরিশোধ করা হয়। পণ্যের প্রচারের জন্য ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকির কারণগুলো বিবেচনা করতে হবে। তারা বিদেশে সরবরাহকারীদের অর্থ প্রদান করে। কিন্তু আমদানিকারকদের সঙ্গে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা নেই। ক্রেডিট লাইন ক্রেডিট ইতিহাস ও আমদানিকারকদের পেমেন্ট আচরণের ভিত্তিতে সেট করা হয়। বাংলাদেশে আমদানিকারকদের প্রদত্ত বিলের গ্রহণের ওপর ব্যাংকগুলোকে নির্ভর করতে হবে। ব্যবসা ঝুঁকি সঙ্গে এমবেড করা হয় ব্যাংকগুলো আমদানি অর্থায়নের জন্য আমদানিকারকদের কাছে এক্সপোজার নেয়। রপ্তানি বিল অর্থায়নের ক্ষেত্রে, তারা কাউন্টারপার্ট ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভর করে। ডিফল্ট পরিস্থিতিতে সমাধান সহজে পাওয়া যায় না, একই ধারণা এখানে। খোলা অ্যাকাউন্টের অধীনে বিক্রয়-ক্রয় চুক্তি দ্বারা বাণিজ্য সম্পাদন করা হয়। আমদানিকারকদের ব্যাংকগুলো বিদেশে সরবরাহকারীদের কাছে তাদের দেওয়া আমদানি বিল গ্রহণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট আমদানির অর্থদাতা হতে পারে। এই স্বীকৃতি আইন দ্বারা প্রয়োগযোগ্য একটি আইনি নথি। যেমন, ব্যাংকগুলো সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত নয়, তাদের সুরক্ষা রয়েছে।
দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বিলের মেয়াদপূর্তির আগে প্রাপ্ত প্রারম্ভিক অর্থপ্রদানের জন্য ব্যয়ের সম্মুখীন হয়।
তাছাড়া এলসি পদ্ধতি ছাড়াই রপ্তানি বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। ঠিক যেমন বিপরীত, আমদানি বাণিজ্য হওয়া উচিত বিক্রয়-ক্রয় চুক্তির ব্যবস্থার অধীনে যার জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের দ্বারা গৃহীত আমদানি বিলের ভিত্তিতে অর্থায়ন সুবিধা প্রসারিত করতে পারে। এটি দেশের জন্য খরচ সঞ্চয় মানে ব্যাংকের আয় তৈরি করবে। অন্যদিকে বিক্রয়-ক্রয় চুক্তিগুলো সাধারণত এলসির মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে কমিশনের আওতার বাইরে থাকে। খোলা অ্যাকাউন্টের অধীনে বাণিজ্য এলডিসি-র বাইরের দেশগুলোর জন্য প্রভাবিত হয়। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই মর্যাদার বাইরে। বিদেশে সরবরাহকারীদের কাছে সরাসরি ব্যাংকের অর্থায়নের বিকল্প সহ আমদানি বাণিজ্যের জন্য এলসিগুলো ফেজ করার উপযুক্ত সময়। এটি একটি খরচ সাশ্রয়ের হাতিয়ার হতে পারে যার জন্য ট্রেড রেগুলেশনগুলোকে প্রস্তাবের সঙ্গে সারিবদ্ধ করা দরকার।
লেখক : উন্নয়ন খাতে কাজ করেন। সূত্র : দি এশিয়ান এজ। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ