রপ্তানি আয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার পার্থক্য ইপিবি ও বাংলাদেশে ব্যাংকের হিসাবে গরমিলের পাঁচ কারণ চিহ্নিত
সোহেল রহমান : [১] গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ও প্রকৃত চালানের মধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার পার্থক্যের সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হিসেবে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (বেপজা) কর্তৃক দেশের অভ্যন্তরে পণ্য বিক্রিকে রপ্তানি হিসেবে দেখানো, সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলারের রেটের হেরফের, শর্ট শিপমেন্ট, ক্রেতা কর্তৃক আরোপিত ছাড়, বৈদেশিক ব্যাংকের চার্জ ও ফেরত আনা পণ্যকে রপ্তানির অংশ থেকে বাদ না দেয়া ইত্যাদি। [২] ইপিবি সূত্রে জানা যায়, কারণগুলো চিহ্নিত করে ইতোমধ্যেই তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা প্রকাশ করবে।
[৩] প্রসঙ্গত: ইপিবি’র হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য অর্থবছরের এক্সপোর্ট প্রসিড এসেছে ৫ হাজার ৯৭ কোটি ডলার। [৪] বিশাল এই পার্থক্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে ইতোমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের একটি অংশ মনে করছেন, এর বড় অংশই রপ্তানিকারকরা ইচ্ছা করে দেশে আনছেন না বা পাচার করেছেন। বিশেষত ক্রমাগত ডলারের দর বাড়তে থাকায় কেউ কেউ স্থানীয় মুদ্রায় বাড়তি দর পাওয়ার আশায় দেরি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে দেশে যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট চলছে, তখন এত বড় পরিমাণ রপ্তানি আয় দেশে না আসা রিজার্ভ সংকট কমানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবেও দেখছেন তারা। [৫] ইপিবি’র মতে, কেউ যদি অর্থপাচার করতে চায় তাহলে আন্ডার ইনভয়েসে রপ্তানি করবে। ওই হিসাব তো রপ্তানির মধ্যেই যুক্ত হওয়ার কথা নয়। আর এ কারণে হিসাবে পার্থক্য হওয়ার কথা নয়।
[৬] জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী, রপ্তানি অঞ্চলে অবস্থিত কারখানাগুলো বন্ডেড গুদাম সুবিধাসহ অন্যদের কাছে কাঁচামাল হিসেবে পণ্য বিক্রি করতে পারে। আর এ জাতীয় লেনদেনগুলো রপ্তানি হিসেবে বিবেচিত হয়।
[৭] আর ব্যাংকের এলসিতে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা উল্লেখ থাকে, প্রকৃতপক্ষে এর চেয়ে কম রপ্তানি হওয়াকে বলা হয় শর্ট শিপমেন্ট।
[৮] এছাড়া কাস্টমসের ডাটাবেজে রপ্তানি পণ্য তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেটি রপ্তানি না হলে বাদ না দেয়া, পণ্যগুলোকে দু’বার গণনা করা ও রপ্তানি হিসাবের মধ্যে বিনামূল্যে বায়ার কর্তৃক পাঠানো কাঁচামালের অন্তর্ভুক্তিও রপ্তানি ডেটার এই অমিলের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
[৯] ইপিবি সূত্রমতে, এসব হিসাব আমলে নেয়া হলে এই বিশাল গ্যাপ অনেকাংশেই কমে যাবে।
[১০] সূত্র জানায়, এছাড়া রপ্তানি আয় দেশে প্রত্যাবাসন না করা প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তারও কিছু কারণ চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে ইপিবি। তিন মাস আগে রপ্তানি ও রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন নিয়ে বিস্তর অমিলের কারণ খুঁজে বের করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
[১১] ইপিবি সূত্র জানায়, রপ্তানি আয়ের হিসাবে বিশাল পার্থক্য থাকার কারণ খুঁজতে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে গত ২০ ডিসেম্বর সভা করেছে ইপিবি। সভায় প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে ইপিবি, ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
[১২] এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক্সপোর্ট গ্যাপের জন্য ঢালাওভাবে রপ্তানিকারকদের অভিযুক্ত করা ঠিক নয়। আমরা ইপিবিকে বলেছি, যাতে সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে তা প্রকাশ করা হয়। সেখানে যদি রপ্তানিকারকের দায় থাকে, তাও প্রকাশ করা হোক।
[১৩] তাদের মতে, এই অমিলের বড় কারণ হলো ইপিজেড-এর অভ্যন্তর থেকে বাইরের কারখানায় বিক্রি করা পণ্য দেশের মধ্যে পেমেন্ট হয়, কিন্তু তা রপ্তানি হিসেবে কাউন্ট হয়। এর পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের মতো হতে পারে।
[১৪] অন্যদিকে ইপিবি’র হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৭০ কোটি ডলার।