শেয়ারবাজারের জন্য ১৭ ব্রোকারেজ হাউস পাচ্ছে ৫৫ কোটি টাকার ঋণ
আমিনুল ইসলাম : [১] শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল (সিএমএসএফ) থেকে ঋণ চেয়েছে ১৭টি ব্রোকারেজ হাউস। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের শর্তে সিএমএসএফের পর্ষদ স্বল্প সুদে ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব্রোকারেজ হাউসগুলো এই ঋণের জন্য আবেদন করে।
[২] আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। তার আগে কমিউনিটি ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ বিতরণসংক্রান্ত চুক্তি করবে সিএমএসএফ কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাংকের মাধ্যমেই এ ঋণ বিতরণ করা হবে। তবে সিএমএসএফের পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১৭টি ব্রোকারেজ হাউসের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। গত মঙ্গলবার তহবিলটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
[৩] সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার পর্যন্ত যে ১৭টি ব্রোকারেজ হাউস তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পেতে আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে মিডওয়ে সিকিউরিটিজ, রাস্তি সিকিউরিটিজ, মোনার্ক হোল্ডিংস, রিলায়েন্স ব্রোকারেজ সার্ভিস, বিনিময় সিকিউরিটিজ, বিডি ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ, বারাকা সিকিউরিটিজ, পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ইমার্জিং গ্লোবাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, বেটাওয়ান ইনভেস্টমেন্ট, সিএএল বা ক্যাল সিকিউরিটিজ, বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স, ম্যাট্রিক্স সিকিউরিটিজ, এসআইবিএল সিকিউরিটিজ, কাজী ইক্যুইটিজ এবং ইবিএল সিকিউরিটিজ।
[৪] এদের মধ্যে রিলায়েন্স ব্রোকারেজ, বিডি ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ ও বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল, পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স, এসআইবিএল সিকিউরিটিজ এবং ইবিএল সিকিউরিটিজ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউস। সিএমএসএফের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা করে মোট ৩৫ কোটি টাকা ঋণসহায়তা পাবে।
[৫] বাকি ১০টি ব্রোকারেজ হাউস ২ কোটি করে মোট ২০ কোটি টাকা ঋণ পাবে। সব মিলিয়ে উল্লিখিত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেওয়া হবে। তবে শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান কত ঋণ পাবে, তা নির্ভর করবে কয়েকটি শর্তের ওপর। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে ঋণের বিপরীতে জামানত দেওয়ার সক্ষমতা ও ঋণগ্রহীতাদের ঋণের সমপরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ।
[৬] সিএমএসএফের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউসগুলো এ ঋণের বিপরীতে তহবিল কর্তৃপক্ষকে ৭ শতাংশ হারে সুদ দেবে। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নেবে ১ শতাংশ সেবা মাশুল বা সার্ভিস চার্জ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলো ৮ শতাংশ সুদে এ ঋণ পাবে।
[৭] শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সিএসএমএফ থেকে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের স্বল্প সুদে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তহবিলটির পরিচালনা পর্ষদ। এ জন্য সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করা হয়। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ ঋণের বিপরীতে সিএমএসএফ কর্তৃপক্ষ ৯ শতাংশ হারে সুদ নেবে। পরে সুদহার কমিয়ে ৭ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়।
[৮] পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত মাসেই ঘোষণা দিয়েছিল যে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হবে। বিএসইসির ওই ঘোষণার পর সিএমএসএফ তহবিল থেকে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
[৯] মূলত ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর যাতে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে বিএসইসির পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ২১ জানুয়ারি শেয়ারবাজারের ৩৫টি বাদে বাকি সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার তুলে নেওয়া হয় আরও ২৩টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস আরোপ রয়েছে মাত্র ১২টি কোম্পানির ওপর।
[১০ শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে বিএসইসি ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। ফ্লোর প্রাইস ছিল এমন একটা ব্যবস্থা, যার আওতায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেয়। এর ফলে বেঁধে দেওয়া দামের নিচে কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের নামার সুযোগ ছিল না। এখন সেই বাধা উঠে গেছে। ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর শেয়ারবাজারের লেনদেনে গতি ফিরেছে।
[১১] সিএমএসএফের ঋণের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, ঋণসুবিধা নেওয়া ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকেও ঋণের সমপরিমাণ অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, কোনো একটি ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক সিএমএসএফ থেকে স্বল্প সুদে ৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। তাহলে তার বিপরীতে ওই প্রতিষ্ঠানকেও নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।